‘ভালোবাসা হাসপাতাল’-এর কাজ কী?

Looks like you've blocked notifications!

বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তৃতীয় পক্ষের আগমন, সম্পর্কে টানাপড়েন, অবিশ্বাস ও পরে ভাঙন। এটা যেন বর্তমান সমাজের একটা প্রতিচ্ছবিই বলা চলে। এই ভাঙাগড়ার মাঝপথে, ফোনকল চেক, পিছু নেওয়া, ঝগড়াঝাটির পর্বটিও চলে। তবে শেষ রক্ষা হয় না। কেননা, একপক্ষ চাইলেও সম্পর্ক রাখতে চাইছেন না অন্যজন, গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে তৃতীয় পক্ষই।  

এই তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে সম্পর্কের এই ক্ষত সারাতে চীনের সাংহাইয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ভালোবাসার হাসপাতাল’ বা ‘লাভ হসপিটাল’। কর্তৃপক্ষের মতে, সম্পর্কের মাঝে মূল সমস্যাটিই হলো স্ত্রীর মতো আচরণ। স্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে প্রেমিকা হয়ে উঠতে পারলেই ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে রাখা সম্ভব।

এই হাসপাতালে  স্ত্রীদের তাঁদের ভালোবাসার প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকে ভালোবাসার মানুষটিকে ফিরিয়ে আনতে পরামর্শ দেওয়া হয়, যারা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই হাসপাতালের এক নারী গ্রাহক বলেন, ‘আগে আমার কাছে এটা শুধু বিয়ে মনে হয়েছিল কিন্তু এখন অনেকটা ভালোই মনে হচ্ছে। এটাই বোধহয় সত্যিকারের বাঁচা।’

হাসপাতালটিতে বেশ কয়েক সপ্তাহ কাউন্সেলিংয়ের পর ওই নারী অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানান। শিখেছেন কীভাবে আরো দায়িত্বশীল স্ত্রী হওয়া যায়, নিজেকে আরো ভালো করে তোলা যায়।

হাসপাতালটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মিং লি বলেন, ‘তাঁর মতো স্ত্রীদের পরামর্শ দেওয়া হয়, সফল দাম্পত্য জীবনের রহস্য সম্পর্কে, কীভাবে স্বামীর দৃষ্টি নিজের দিকে ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে। যদিও অনেক সময়ই এটা অনেক দেরি হয়ে যায়।’

সেবা নিতে সেই নারী বলেন,‘ প্রথম যখন আমি আমার স্বামীর সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে পারি, তাঁর সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়, আমি বারবার প্রশ্ন করতে থাকি, সে কেন এমনটা করে? প্রথমটা সে ভুল বুঝতে পেরেছে বোঝাতে চাইত। কিন্তু শেষে সে কথাই বলতে চাইত না। তারপরই আমি হাসপাতালের সহায়তা নিই।’

সেই নারী আরো বলেন, ‘অবশ্যই আমি তাঁকে এখনো ভালোবাসি। এখন আমি আমাদের মধ্যকার সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানি মূল সমস্যাই হলো স্ত্রী হওয়া। স্ত্রীকে সরিয়ে প্রেমিকা হয়ে উঠলেই এর সমাধান সম্ভব।’

হাসপাতালে শেখানো হয়, কীভাবে তাঁর স্বামীর পাশে তাঁর বয়সী ভালোবাসার প্রতিদ্বন্দ্বীটির চাইতে তিনি ভালো করতে পারেন। এর জন্য তাঁকে হয়তো এক হাজার ডলার গুনতে হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের চেয়ে তিনি এই পথটিকেই ভালো মনে করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘বিচ্ছেদ কোনো রাস্তা হতে পারে না। আমি এটা নিয়ে কোনোদিনই ভাবিনি। আমি হাল ছাড়তে চাইছিলাম না।’

ভালোবাসা হাসপাতালের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা শু-চীন বলেন, ‘আমাদের কাছে ৩৩টি উপায় আছে একজন স্ত্রীকে দূর করে, প্রেমিকা করে তোলার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা হয়ে থাকে অন্য কোথাও সম্পর্ক থাকার জন্য। এটা খুবই ভয়ানক। এটা পরিবার ও সমাজের পথে বাধা।’

শু-চীং ও মিং লি জানান, হাসপাতালটি তাঁরা প্রায় ১৭ বছর ধরে পরিচালনা করছেন। এই সময়ে তারা লক্ষাধিক গ্রাহককে সেবা দিয়েছেন।