জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত নারী

Looks like you've blocked notifications!
সোমালিয়ার শাবেলা অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংগ্রহ করছেন নারীরা। ছবি : রয়টার্স

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে এখন সরগরম গোটা বিশ্ব। কার দোষে, কী কারণে, কেন এত দ্রুত দৃশ্যমান হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন—তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। 

সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পুরুষদের চেয়ে নারীর ওপর বেশি পড়ে। এমনিতেই বেশিরভাগ সামাজিক পরিস্থিতিতে নারীরা পুরুষের তুলনায় অরক্ষিত অবস্থায় থাকেন। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট কোনো দুর্যোগ নারীকে আরো বেশি বিপদে ফেলে দেয়। 

জাতিসংঘ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতদের তালিকায় ৮০ ভাগই নারী। 

বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণত একটি পরিবারে নারীরা অন্য সদস্যদের খাবার তৈরি ও যত্নের দায়িত্বে থাকেন। তাই বন্যা বা খরার সময়গুলোতে সংসার চালিয়ে নেওয়া তাঁদের জন্য আরো কঠিন হয়ে পড়ে।  
ভারতের আসামে চা বাগানে কাজের ফাঁকে পানি সংগ্রহ করছেন নারী শ্রমিকরা। ছবি :  রয়টার্স

মধ্য আফ্রিকার শাদ লেকের ৯০ শতাংশই বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ওই লেকের ওপর নির্ভর করা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষের জীবনও হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। যেহেতু পরিবারের সদস্যদের জন্য দৈনিক পানির জোগান নারীরাই করেন, সেহেতু এখন সেই পানি সংগ্রহ করতে তাঁদের হাঁটতে হচ্ছে আরো বেশি পথ। খরার সময় এসব জনগোষ্ঠীর পুরুষেরা কাজের সন্ধানে অন্যত্র যান। তখন পুরো সমাজের মানুষের দেখাশোনার দায়িত্ব থাকে নারীদের ওপর। যেহেতু এখন খরা অনেক বেশি সময় ধরে থাকে, সেহেতু পরিবারের সদস্যদের খাবার ও পানীয়ের জোগান দিতে নারীদের আরো বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তাঁরা আরো বেশি বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।

সম্প্রতি এসব কথা বিবিসিকে জানিয়েছেন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিজেনাস উইমেন অ্যান্ড পিপল অব শাদের (এএফপিএটি) পরিচালক হিন্দো উমারু ইব্রাহিম। 

বিষয়টি এমন নয় যে শুধু গ্রামের নারীরাই এই জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত। বরং গোটা বিশ্বেই পুরুষের চেয়ে কঠিন অবস্থায় আছেন  নারীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে কম আর্থসামাজিক ক্ষমতা থাকায় তাঁদের জন্য টিকে থাকা আরো কঠিন হয়ে উঠছে। 

২০০৫ সালের হারিকেন ক্যাটরিনার ঝড়ে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার আফ্রিকান আমেরিকান নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। সে সময় ঝড়ের পর নারীদের জন্য জরুরি আশ্রয় ছিল অপর্যাপ্ত। সাময়িকভাবে নারীদের যেখানে থাকতে দেওয়া হয়, সেখানেও পর্যাপ্ত স্যানিটারি পণ্যের সুবিধা ছিল না। এসবের সঙ্গে সমঝোতা করেই টিকে থাকার ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যান সেখানকার বাস্তুচ্যুত নারীরা, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন দরিদ্র। 

এ ছাড়া ২০০৪ সালে আঘাত হানা সুনামির পর শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে দেখা যায়, বেঁচে যাওয়া পুরুষ ও নারীর অনুপাত ৩ : ১। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, পুরুষরা নারীদের চেয়ে ভালো সাঁতার জানেন। শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে থাকেন নারীরা। কারণ পরিবার, সন্তান ও অন্যদের প্রতি খেয়াল রেখে, সবাইকে নিয়ে, সব গুছিয়েই ঘর ছাড়েন তিনি। ফলে পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয় তাঁর সামনে।