মুক্তি পেল চলচ্চিত্র ‘মুহাম্মদ’ (সা.)
নানা সমালোচনা আর বিতর্কের মধ্যে বুধবার মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের একাংশ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মুহাম্মদ’ (সা.)।কারিগরি সমস্যার কারণে তা ২৪ ঘণ্টার জন্য পেছানো হয়েছে। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার রাতে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে।
একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, কারিগরি সমস্যার কারণে উদ্বোধনী প্রদর্শনীর সময় পেছানো হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার রাতে তেহরান ও কানাডায় একসঙ্গে ছবিটির প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
ইরানের অষ্টম শিয়া ইমাম রেজা (আ.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ আগস্ট দেশটিতে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। পরের দিন অর্থাৎ ২৭ আগস্ট থেকে কানাডায় শুরু হওয়া মন্ট্রিয়াল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটির আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হওয়ার কথা।
ইরানের সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, ইরানের সিনেমা হলে যে ধরনের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তার সাথে ছবিটির সাউন্ড সিস্টেমের মিল নেই। এর ফলে উদ্বোধনী প্রদর্শনী পিছিয়ে দিতে হয়।
ছবিটির প্রযোজক মোহাম্মদ রেজা সাবেরি বলেন, ‘যাঁরা অগ্রিম টিকেট কিনেছেন, তাঁরা ওই টিকেট দিয়েই বৃহস্পতিবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত ছবিটি দেখতে পারবেন।’
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের প্রথমভাগের বিভিন্ন অংশ তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। ইরানের বিখ্যাত পরিচালক মাজিদ মাজিদি নির্মিত এই ছবিটি ইরানের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি। যা নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা (৪০ মিলিয়ন ডলার)।
এই ছবি নিয়ে বিতর্কের কারণ পবিত্র কোরআনে মহানবীর চরিত্র রূপায়ণ না করতে মুসলমানদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া আছে। বিশ্বের সব মুসলমান, বিশেষ করে সুন্নি মুসলমানরা এই নিয়ম কঠোরভাবে পালন করেন।
এ বিষয়ে মিডল ইস্ট অনলাইনকে পরিচালক মাজিদ মাজিদি বলেন, মুহাম্মদ (সা.)-এর চেহারা পর্দায় না দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাই পুরো ছবিতে তাঁর পেছনের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া পুরো ছবিটির দৃশ্যায়ন এমনভাবে হয়েছে যেন মনে হয় মুহাম্মদ (সা.)-এর দৃষ্টি দিয়েই ছবিটি দেখা হচ্ছে।
সবাই মহানবী (সা.) কে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকলেও ছবিতে কোথাও তাঁর চেহারা দেখা যাবে না বলেও জানান মাজিদি। কেবল মহানবী (সা.)-এর ১২ বছর বয়স পর্যন্ত জীবনের কাহিনীই দেখা যাবে ‘মুহাম্মদ’ (সা.) নামের চলচ্চিত্রটিতে।
মোহাম্মদ মেহেদি হেইদারিয়ান প্রযোজিত এই ছবির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে ইরান ও দক্ষিণ আফ্রিকার শহর বেলা-বেলাতে।
বিরাট বাজেটের এই ছবিতে কাজ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারিগরি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। যেমন– সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন ইতালির ভিট্টোরিও স্টোরারো, এডিটিং করেছেন ইতালির রবার্টো পেরপিগনানি, স্পেশাল ইফেক্টের কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্কট ই এন্ডারসন, মেকআপ করেছেন ইতালির গায়ানেট্টো ডি রোসি এবং সংগীত সংযোজনে কাজ করেছেন ভারতের এ আর রহমান।
ছবিতে অভিনয় করেছেন সারাহ বায়াত, মোহসেন তানাবানদেহ, মাহদি পাকদেল, রা’না আজাদিভার, আলী রেজা সুজা নূরি, মোহাম্মদ আজগারি, মিনা সাদাতিসহ ইরানের বিখ্যাত সব অভিনয়শিল্পী। ফার্সি, আরবি ও ইংরেজি এই তিন ভাষায় মুক্তি পাবে ছবিটি।
ইরানের পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার মাজিদ মাজিদির ঝুলিতে রয়েছে বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ১৯৯৯ সালে অস্কার পুরস্কারের বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে প্রথম ইরানি ছবি হিসেবে মনোনয়ন পায় তাঁর ছবি ‘চিলড্রেন অব হেভেন’। এ ছাড়া ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ১০ ছবির তালিকায় ছিল মাজিদির আরেক ছবি ‘কালার অব প্যারাডাইস’।