বাড়ছেন ভূতেশ্বর বাবা!
বাড়ছেন ‘ভূতেশ্বর বাবা’! প্রতিবছর ইঞ্চিখানেক করে লম্বায় আর চওড়ায় বাড়ছেন তিনি। আর তার এই বাড়বাড়ন্ত ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে এক বিস্ময়। এই ভূতেশ্বর বাবা হলো পাথরের এক শিবলিঙ্গ।
ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের গড়িয়াবান্দ জেলার মারোদা গ্রাম। এই গ্রামেই অবস্থান ভূতেশ্বর বাবার। বর্তমানে ১৮ ফুট লম্বা এবং ২০ ফুট চওড়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এই শিবলিঙ্গ। তবে শুরুতে এর আকার কতটুকু ছিল তা সঠিকভাবে জানাতে পারেনি কেউ। ‘জাগ্রত’ এই শিবলিঙ্গরূপী ভূতেশ্বর বাবার বড় হওয়া দেখতে প্রতিবছর মানুষের ঢল নামে এখানে। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষই নন। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষই এখানে ভিড় জমায়।
ভূতেশ্বর বাবার বড় হওয়ার খবর শুনে অনেকেই অবাক হন। অনেকের কাছেই বিষয়টি আজগুবি মনে হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণ একটি প্রস্তর খণ্ড কীভাবে বাড়তে পারে। কিন্তু গড়িয়াবান্দের স্থানীয় রাজস্ব দপ্তরে প্রতি বছর এই শিবলিঙ্গের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে বেড়ে যাওয়া বিষয়টি লিপিবদ্ধ আছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই নাকি এই শিবলিঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এলাকায় কথিত আছে, আজ থেকে বহু যুগ আগে এই মারোদার অঞ্চলে এক প্রতাপশালী জমিদার বসবাস করতেন। একদিন তিনি গ্রামের লোকজনের মুখে শুনতে পান, গ্রামের পাশের এক জঙ্গল থেকে নাকি সিংহের গর্জন শোনা যাচ্ছে। কাল বিলম্ব না করে তিনি বন্দুক হাতে ছুটে যান জঙ্গলের গভীরে। তারপর সেই গর্জনের উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করে রীতিমতো চমকে যান সেই জমিদার। দেখেন সিংহ নয়, ঝোঁপঝাড়ের ভেতরে জেগে ওঠা একটি ঢিপি থেকে ওই গর্জন শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেই খবর বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। দলে দলে মানুষজন ছুটে আসতে থাকে ওই অদ্ভুত ঢিপি দেখতে। একসময় এলাকার বাসিন্দারা ভয় এবং ভক্তিতে ওই ঢিপিকে শিবজ্ঞানে পুজো করাও শুরু করে দেয়। এলাকার লোকজন ওই অদ্ভুত ঢিপিকে নাম দেয় ভূতেশ্বর বাবা। শুরু হয় ভক্তদের আনাগোনা। ছড়িয়ে পড়তে থাকে ভূতেশ্বর বাবার নানা মাহাত্ম্যের কথা। এরপর সেই ছোট্ট একটা ঢিপি নাকি বাড়তে থাকে একটু একটু করে। আজ সেই ছোট্ট ঢিপিটি পাহাড়ের আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এই আশঙ্কায় এখনো পর্যন্ত শিবলিঙ্গরূপী এই ভূতেশ্বর বাবার কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। তবে ভক্তদের বিশ্বাস, এটা নির্ঘাত ভূতেশ্বর বাবার মহিমা। আর সেই মহিমায় ভর করে প্রতিবছর শ্রাবণ মাসে ভূতেশ্বর বাবার মাথায় পানি ঢালতে ভক্তদের লম্বা লাইন পড়ে এখানে। আর এই ভূতেশ্বর বাবার কৃপাতেই ছত্তিশগড়ের অখ্যাত মারোদা গ্রাম আজ হয়ে উঠেছে বিখ্যাত।