মাফিয়া থেকে রাঁধুনি, খাবার দেন অভুক্তদের

Looks like you've blocked notifications!
তাইওয়ানের সাবেক মাফিয়া ইয়েন ওয়েই-শুন। ছবি : সংগৃহীত

দস্যু রবিন হুডের গরিবকে সেবা করার ব্যাপারটা শুধু গল্পেরই না, বাস্তবের দুনিয়াতেও অনেক মানুষের সঙ্গে সেগুলোর মিল থাকে। এই যেমন তাইওয়ানের সাবেক মাফিয়া ইয়েন ওয়েই-শুন দীর্ঘ এক জীবন অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর সেই তিনিই এখন সে জীবন ছেড়ে হয়ে গেছেন পুরোদস্তুর একজন রাঁধুনি। যেমন-তেমন রাঁধুনি নয়, অপরাধ জীবনের দায় মেটাতে ইয়েন নিজের হাতে নুডলস রেঁধে অভুক্ত মিসকিনদের খাওয়ান।

ইয়েনের বয়স এখন ৪০। মাত্র ১৫ বছর বয়সে দুই দল সন্ত্রাসীর সহিংসতায় সাড়ে চার বছরের জন্য জেলে যান ইয়েন। জেল থেকে বেরোবার পর নিজেকে বিন্দুমাত্র না শুধরে তিন আবার অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং অবৈধভাবে অস্ত্র রাখার দায়ে গত আট বছর আগে আবারও আদালতের মুখোমুখি হন। বিচার হয়ে যাওয়ায় তিনি কোনোমতে বেরিয়ে আসতে পারেন। ইয়েন এটিকে তাঁর জন্য ‘স্বর্গ থেকে বরাদ্দ দ্বিতীয় সুযোগ’ বলে ডাকেন।
‘ওই মামলাটি ছিল আমার জন্য জেগে ওঠার একটি আহ্বান। আমি অনুভব করতে পারি যে (আগামীর  জন্য) আমার যা আছে, পরিবার আর এই মুক্তি এগুলোর পরিচর্যা করা উচিত,’ সংবাদ সংস্থা এএফপির কাছে এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করেন ইয়েন।

তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের ঐতিহ্যবাহী ব্যস্ততম এক মার্কেটে  ইয়েনের পরিবার কয়েক দশক ধরে একটি নুডলসের দোকান চালিয়ে আসছে। সেখানেই গত চার বছর ধরে মায়ের সঙ্গে ইয়েনও নুডলস রান্নার কাজ করতে শুরু করে। যারা টাকার অভাবে খেতে পায় না, তাদের বিনা পয়সায় বাটি ভরে নুডলস খেতে দেন তিনি।

ইয়েনের এই কার্যক্রমের ব্যাপারে স্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম নজর দেয়। এর পরে সাংহাইভিত্তিক একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে তাঁর জীবন নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র তৈরি করলে সেটি ইউটিউবের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ দেখতে থাকে।

ইয়েনের পারিবারিক দোকানে নিয়মিত খরিদ্দাররা চিংড়ি আর বাঁধাকপি সহযোগে বানানো এক বাটি নুডল্স ৮০ তাইওয়ানি ডলার দিয়ে কিনতে পারবেন। কিন্তু তারা আরেক বাটি নিতে পারবেন ৭৫ ডলারে, যদি তা অভুক্তদের দেন। এ ব্যাপারে খরিদ্দারদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এর পরেও ঘাটতি পড়লে ইয়েন নিজের পকেট থেকে সেটি পরিশোধ করেন।

ইয়েন মাসে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ বাটি নুডলস এভাবে সরবরাহ করেন।  গত চার বছরে তিনি প্রায় ৪০ হাজার বাটি নুডলস দিয়েছেন অভুক্তদের।

ইয়েন জানান, যারা বিনা পয়সায় খেতে চায়, তাদের বেশির ভাগই বয়স্ক কিংবা বেকার তরুণ-তরুণী। এর বাইরেও শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খাবার পৌঁছেও তিনি।

এসবের বাইরেও আর কিছু দাতব্য সামাজিক কাজ করেন ইয়েন। প্রায়ই তিনি বিভিন্ন কারাগারে গিয়ে অপরাধীদের নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলেন এবং সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের ব্যাপারে তাদের বোঝান।

ইয়েনের নুডলসের দোকানে বিনা পয়সার খাবার খেতে আসে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ৬২ বছর বয়সী এক সাবেক মাফিয়া। ইয়েন বলেন, সাবেক মাফিয়ার জীবনের পরিণতি তাঁর (ইয়েনের) নিজের জীবনের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক এক শিক্ষা হিসেবে কাজ করে।

‘আমি অনেক বয়স্ক মাফিয়াকে দেখেছি, যাদের পরিণতি ওই বৃদ্ধের মতো। আমি দেখি আর খুব কষ্ট পাই এই ভেবে যে, জীবনের কতটা সময় অপচয় করেছি,’ বলেন ইয়েন। পরিবারের সমর্থন আর মানুষের ভালোবাসা তাঁকে সঠিক পথে রাখতে সহায়তা করেছে বলে জানান তিনি।

মাফিয়া-জীবনের কথা স্মরণ করে ইয়েন বলেন, ‘অপরাধ জগতের সেই দিনগুলোতে আমার সব সময়ই মনে হতো আমি একটি সরু দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটছি, যেখানে যে কোনো সময় শত্রু দলের সঙ্গে আমার দেখা হতে পারে। কিন্তু এখন আমি যেখানেই যাই আমি তাদের দেখতে পারি যারা আমাকে ভালোবাসে আর দেখে খুশি হয়।’