সাংবাদিক নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি-তুর্কি টানাপড়েন তুঙ্গে
সৌদি আরবের সরকারবিরোধী সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিখোঁজের ঘটনায় দেশটির সঙ্গে তুরস্কের কূটনৈতিক টানাপড়েন তুঙ্গে উঠেছে।
তুর্কি সরকারের দাবি, সাংবাদিক খাসোগিকে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরেই খুন করা হয়েছে। তবে এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন সৌদি কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, খাসোগি তাঁদের কনস্যুলেট ছেড়ে যাওয়ার পরই নিখোঁজ হন।
এখন সৌদি কর্মকর্তাদের এ দাবির প্রমাণ চেয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, খাসোগি ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বলে সৌদি কর্মকর্তারা যে দাবি করছে, তার পক্ষে প্রমাণ দিতে হবে।
এরদোগান আরো বলেন, ‘খাসোগি কনস্যুলেট ভবন ছেড়ে গিয়েছিলেন, এসব বলে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন না কনস্যুলেট কর্মকর্তারা।’
এর আগে রোববার তুর্কি সরকারের কর্মকর্তারা জানান, খাসোগিকে কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে, তার অকাট্য প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। এ লক্ষ্যে গত সপ্তাহে ১৫ সদস্যের একটি দল সৌদি আরব থেকে তুরস্কে পৌঁছায় বলেও জানায় তুরস্ক।
ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট ভবনে তল্লাশি চালাতে চেয়েছে তুরস্ক। অন্যদিকে এর আগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জানান, কনস্যুলেট ভবনে তল্লাশি করতে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়, সেখানে লুকানোর কিছু নেই।
সর্বশেষ গত সপ্তাহের বুধবার খাসোগিকে কনস্যুলেটে যেতে দেখা যায়। তার পর থেকেই তাঁর কোনো হদিস মিলছে না। সাবেক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার একটি নথি সংগ্রহ করতে তিনি কনস্যুলেটে যান। হবু স্ত্রী তুর্কি নারী হেতিস চেঙ্গিজকে বিয়ে করতে তাঁর ওই নথির প্রয়োজন ছিল।
হেতিস জানান, কনস্যুলেটে প্রবেশের আগে খাসোগি তাঁকে ফোন করে বলেন, যদি তিনি না ফেরেন, তাহলে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের একজন উপদেষ্টাকে ফোন করে বিষয়টি জানাতে। তিনি বলেন, অন্যান্য কূটনৈতিক কার্যালয়ের মতো সেখানেও তাঁর মোবাইল ফোন জমা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছিল।
খাসোগির সঙ্গে ১৮ বছর ধরে পরিচিত বিবিসির নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদক ফ্রাঙ্ক গার্ডেনার এক বিশ্লেষণে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমরা হয়তো আদৌ কোনো দিন বিষয়টির সত্যতা জানতে পারব না।’
সৌদি রাজতন্ত্রে ক্ষমতার পালাবদলে জামাল খাসোগির নিকটস্থ অনেকেই গ্রেপ্তার হন। খাসোগি কিছুদিন ধরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনা করে আসছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্টের মতামত বিভাগের নিয়মিত এই লেখকের টুইটার অ্যাকাউন্টে ১৬ লাখ ফলোয়ার রয়েছে।
সৌদি দৈনিক আল ওয়াতানের সাবেক এই সম্পাদক একটি সংবাদধর্মী টিভি চ্যানেলের সম্পাদকও ছিলেন, যেটি অল্প কিছুদিন চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। খাসোগি একসময় সৌদি রাজপরিবারের অত্যন্ত নিকটজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়া সরকারের উচ্চপদস্থ কয়েকজনের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
সৌদি আরবের আলহায়াত পত্রিকা বেশ কয়েকবার তাঁর কলাম বাতিল করে। দেশ ছাড়ার পর তিনি পশ্চিমা পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে চলেছেন এবং নিয়মিত টিভি-টকশোতে হাজির হয়ে সৌদি সরকারের সমালোচনা করতেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খাসোগির নিখোঁজের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং আমি এ বিষয়ে কিছু শুনতে চাই না।’
সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগির রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া নিয়ে পাশ্চাত্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যমে বেশ কয়েক দিন ধরেই তুমুল হৈচৈ চলছিল, এখন তা পুরোদস্তুর হত্যারহস্যে রূপ নিয়েছে।