খাসোগি হত্যাকাণ্ড

মৃত্যুদণ্ডের মুখে পাঁচ সৌদি কর্মকর্তা, যুবরাজ জড়িত নন

Looks like you've blocked notifications!
ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের বাইরে বিক্ষোভরত একজনের হাতে সাংবাদিক জামাল খাসোগির ছবিসহ পোস্টার। ছবি : রয়টার্স

এবার সৌদি আরব বলছে, গোয়েন্দা কর্মকর্তার নির্দেশে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে এবং সেই ১১ সৌদি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ চাওয়া হয়েছে।

দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রধান কৌঁসুলির দ্প্তরের এক মুখপাত্র এসব জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হত্যাকাণ্ডটি গোয়েন্দা কর্মকর্তার নির্দেশে ঘটেছে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে নয়। কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিল, সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে বুঝিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে।

এবার বলা হচ্ছে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাসোগি জোরাজুরি করলে তাঁকে প্রাণঘাতী ইনজেকশন পুশ করা হয়, এতে তাঁর মৃত্যু হয়। ১১ জনের নামে মামলা করে তা আদালতে পাঠিয়েছে আইনজীবীর কার্যালয়। সন্দেহভাজন বাকি ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

বৃহস্পতিবার রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি রাষ্ট্র্রীয় আইনজীবী শালান বিন রাজিহ শালান অবশ্য স্বীকার করেছেন, কনস্যুলেটের ভেতর খাসোগির মৃত্যু হলে তাঁর মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছিল।

পরে মরদেহ স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে ওই স্থানীয় ব্যক্তির পরিচয় জানানো হয়নি।

তবে শালান বিন রাজিহ শালান জানিয়েছেন, সৌদি আরবের গোয়েন্দাপ্রধান আহমেদ আল-আসিরির পক্ষ থেকে খাসোগিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইস্তাম্বুলে পাঠানো গোয়েন্দা দলের প্রধানের নির্দেশে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।

সৌদি যুবরাজ কোনোভাবেই এ বিষয়ে কিছু জানতেন না বলে দাবি করা হয়েছে। এর আগে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও অস্বীকার করেন। তবে সমালোচকরা সৌদি যুবরাজের জড়িত না থাকার দাবিটি মানতে নারাজ।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ২১ সৌদি কর্মকর্তার অনেককেই এর আগে সৌদি যুবরাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে। জেনারেল আসিরি ও কাহতানিকে তাঁদের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় সৌদি আরবের ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উপদেষ্টা সৌদ আল-কাহতানিসহ ১৭ সৌদি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এরা বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেছে বা অবস্থান করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এরা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সৌদি সাংবাদিককে হত্যায় জড়িত এবং তাদের এ জন্য ফল ভোগ করতে হবে।

নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্যে ইয়েমেন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সৌদ আল-কাহতানিসহ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দায়িত্বরত মাহের মুতেব এবং ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ আলুতায়িবিও রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এই নিষেধাজ্ঞাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করে এ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে আলোচনা করার কথা জানিয়েছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তা‌ইয়েপ এরদোয়ান এর আগে বলেছেন, সৌদি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই খাসোগি হত্যার নির্দেশ এসেছে। তবে তিনি বিশ্বাস করেন না যে বাদশাহ সালমান এই নির্দেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু সৌদি ডেপুটি রাষ্ট্রীয় আইনজীবীর বক্তব্যকে অপর্যাপ্ত বলেছেন। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলে স্বীকার করার পরেও এখন বলা হচ্ছে, খাসোগি প্রতিবাদ করলে তাঁকে ইনজেকশন পুশ করা হয়। তারা লাশ টুকরো টুকরো করার বিষয়টি স্বীকার করলেও এটা তথ্য প্রদানের স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গি নয়। ঘাতক দল হত্যা করে পরে নিহতের লাশ টুকরো টুকরো করার যন্ত্রপাতি সঙ্গে এনেছিল।’‌‌

তুর্কি কর্মকর্তারা এর আগে জানান, হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা আগে সৌদি আরব থেকে আসা ১৫ সদস্যের দলে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তাঁর কাছে হাড় কাটার করাতও ছিল।

এ হত্যাকাণ্ডের সত্যাসত্য উদঘাটনে তুরস্ক আরো তৎপরতা চালাবে জানিয়ে চাভুসোগলু বলেন, যারা নির্দেশ দিয়েছে এবং যারা জড়িত ছিল, কারো পরিচয় গোপন করা যাবে না।