এ পি জে আবদুল কালামের ৮৪তম জন্মদিন আজ
আজ বৃহস্পতিবার ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের ৮৪তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে রাজধানী নয়াদিল্লিতে তাঁর ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়েছে। রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ডিআরডিও) সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ভাস্কর্য উন্মোচন করেন। এ সময় তিনি ‘মিসাইল ম্যান’ নামে খ্যাত এ বিজ্ঞানীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মোদি বলেন,‘জন্মদিনে ড. এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি অভিবাদন। ২০০২ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে তিনি রাষ্ট্ররত্ন ছিলেন।’ কালামের স্মরণে তাঁর জন্মভূমি তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের ঘোষি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদি তাঁর ওপর একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন।
আবদুল কালাম ২০০২ সালে থেকে ২০০৭ সালে ভারতের ১১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দীর্ঘ চার দশক একজন বিজ্ঞানী ও প্রশাসক হিসেবে তিনি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) ও ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনে (ইসরো) কাজ করেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মিসাইলের ওপর গবেষণা করেছেন। ব্যালাস্টিক মিসাইল ও উৎক্ষেপণ যান তৈরিতে বিশেষ অবদানের জন্যই তাঁকে ‘মিসাইল ম্যান’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তিনি অর্জন করেন ভারত সরকারের সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘ভারতরত্ন’ উপাধি।
১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম উপকূলীয় এলাকায় দরিদ্র জেলে জয়নালাবুদ্দিনের ঘরে জন্মেছিলেন তিনি। বাবা-মা ছোট বয়সেই আদর করে নাম রেখেছিলেন আবুল পাকির জয়নুল আবদিন আবদুল কালাম।
সাত ভাইবোনের অভাবী সংসারের বোঝা টানতে তাঁকেও অল্প বয়সে নামতে হয় কাজে। মেধাবী ও কঠোর পরিশ্রমী এই বালক সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নানা কাজে ব্যস্ত রাখতেন নিজেকে। অভাবের তাড়নায় ভালো কোনো সুবিধা তিনি কখনোই পাননি; কিন্তু পড়াশোনার প্রতি গভীর আগ্রহ তাঁকে পিছিয়ে পড়তে দেয়নি। স্নেহশীল মা আশ্বিমা অভাব সত্ত্বেও মেধাবী ছেলের জন্য জমিয়ে রাখতেন প্রদীপের কেরোসিন, যা জ্বালিয়ে প্রতিভাবান এই ছেলে অব্যাহত রাখতেন তাঁর পড়াশোনা। এভাবে নিজ প্রচেষ্টায় তিনি প্রথমে ইউনিভার্সিটি অব মাদ্রাজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক এবং পরে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ১৯৬০ সালে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞান গবেষণায় তিনি প্রচুর আগ্রহী ছিলেন।
শৈশবে বাড়িতে টিভি দেখার কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে রেডিও ছিল তাঁর বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। যে রেডিওকে আজীবন প্রিয় গণমাধ্যম হিসেবে সঙ্গী করেছিলেন কালাম। ধর্মের প্রতিও ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। প্রতিদিন নিয়মিত নামাজ, রমজানে রোজা করতেন তিনি। সব মিলিয়ে ধর্মপ্রাণ একজন মুসলিম ছিলেন কালাম। নিজেই বলে গেছেন, ‘শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে ধর্ম হলো মিত্রতা বৃদ্ধির অবলম্বন। আর অসাধু ব্যক্তির কাছে এই ধর্মই হলো যুদ্ধের অস্ত্র।’ কালামের জীবনে ধর্মাচারণ ছিল উদারতায় ভরা।
বরাবরই এই বিজ্ঞানতাপসের কাছে প্রিয় ছিল ছাত্ররা। তাই বোধহয় চলতি বছরের ২৭ জুলাই মেঘালয়ের শিলংয়ে সেই ছাত্রদের সামনেই বক্তৃতা দিতে দিতে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।