সিডনির ‘লিটল বাংলাদেশ’ এখন আতঙ্কের নগরী
বাংলাদেশি খাবার, প্রতিদিনের বাজার-সদাই আর বিনোদনের জন্য ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিত অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের লেকেম্বা এখন এক আতঙ্কের নগরী। সম্প্রতি ওই এলাকার ওলাই পার্কে বাংলাদেশি দোকানে ডাকাতি, ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিজের গাড়িসহ ছিনতাইয়ের শিকার, এর দুদিন পরই লেকেম্বার ‘বাংলাদেশ প্যালেস’ দোকানের পেছনের অংশে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিসহ কয়েকটি ঘটনার পর স্থানীয় বাংলাদেশিরা আতঙ্কে আছেন। বিভিন্ন উপশহরেও এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যা মাত্র ৭টা। কিন্তু ওই সময়ই লেকেম্বা স্টেশনে না নেমে ব্যাংকস টাউনে বন্ধুর বাসার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ইরফান হোসেন। কারণ হিসেবে তিনি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছিনতাইসহ মিডেল ইস্টার্ন টিনএজ ছেলেদের বিভিন্ন অত্যাচারের গল্প বলেন। অপর বাংলাদেশি ব্যাংক কর্মকর্তা পুলক আহমেদ ফ্ল্যাট কিনেছেন লেকেম্বার ম্যাকডোনাল্ড স্ট্রিটে, বাসা পরিবর্তন করে নতুন বাসায় এসে সন্তানদের নিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি। অফিসে গিয়েও তাঁর স্বস্তি নেই। সংসারে এসেছে নতুন অতিথি, তাই বাসার দেয়ালে স্টিকার দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছেন ট্রিপল জিরোসহ ক্যাম্পসি পুলিশের জরুরি নম্বর। এই রকম গল্প আছে লেকেম্বার প্রতিটি স্ট্রিটে।
ক্যাম্পসি থানার পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, লেকেম্বা সব সময় তাঁদের কাছে অতি স্পর্শকাতর এলাকা। এনএসডব্লিউ পুলিশ নিয়মিত টহল ছাড়াও তাঁদের স্পেশাল টিম কাজ করে এই শহরে। তাঁদের মতে, কিছু টিনএজের উৎপাতে গোটা কমিউনিটিতে আতঙ্ক নেমে এসেছে। এদিকে সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন লেবার ও লিবারেল পর্টির নেতারা।
লেকেম্বা লিবারেল পার্টির নেতা ও বিজনেস কাউন্সিলের সেক্রেটারি ব্যবসায়ী শাহ জামান টিটু বলেন, গত কয়েক বছরে এ এলাকায় ৪০ বারের বেশি চুরি ও ছিনতাই হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটছে। এ কারণে তাঁদের ব্যবসায় অস্থিরতা নেমে এসেছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর কিছুটা আতঙ্কে থাকে সব দোকান। লোকাল কাউন্সিলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমার দোকান ও আমাকে লক্ষ্য করে এই গ্রুপ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে। এখন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও আর ক্লেইম নেয় না।’
লেকেম্বা এলাকার লেবার পর্টির সভাপতি ও বাংলাদেশি কমিউনিটি লিডার জামিল হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় পুলিশ, ব্যবসায়ী ও কাউন্সিলের সমন্বয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশ এ এলাকায় তাদের টহল আগের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়েছে।’
বাংলাদেশ ইউনাইটেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. ওহাব বকুল বলেন, ‘কমিউনিটির সমস্যা নিয়ে আমরা লোকাল গভর্নমেন্ট থেকে শুরু করে ফেডারেল এমপি পযন্ত গিয়েছি।’ তিনি স্বীকার করেন, এখানে কমিউনিটির সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই স্থানীয় বাংলাদেশি রাজনীতিবিদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিনহাজুল রহমান নামের লেকেম্বার কলিং স্ট্রিটের এক বাসিন্দা বলেন, দেশে কিছু হলে অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিবাদ হয়; কিন্তু কমিউনিটির এত বড় সমস্যা কোনো বাংলাদেশি রাজনীতিক নেতা নেই। এমন ক্ষোভের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, এ দেশে সবকিছু করতে হয় নিয়মতান্ত্রিক, প্রতিটি এলাকায় আছে নিজস্ব রেফারেন্স গ্রুপ। আর লোকাল কউন্সিল এই বিষয়গুলো দেখাশোনা করে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সাধ্য থাকলেও অন্য এলাকায় গিয়ে কাজ করতে পারি না। তার পর বিষয়টি জেনে আমি লোকাল পলিটিশিয়ানদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
বাংলাদেশ কমিউনিটি কাউন্সিলের সভাপতি ও সাউথ এশিয়ান লেবার ফ্রেন্ডসের সদস্য রাশেদুল হক লোকাল মেয়রদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্থানীয় এমপি জিহাদ দিবের সঙ্গে দেখাও করেছেন। এই সমস্যা ও আতঙ্ক অচিরেই চলে যাবে বলে তিনি কমিউনিটিকে আশ্বস্ত করেন।