মা কারাগারে বন্দি : জেলগেটে দুই শিশু সন্তানের অপেক্ষা
দুই বোন হামস, ৮, ও হায়া, ৬, মিসরের একটি জেলখানার গেটে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। বেশ কিছুদিন ধরে তাঁদের কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে জেলখানার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি অবুঝ শিশুর করুণ মুখের ছবি নাড়া দিয়েছে সবার হৃদয়কে। এমনকি ফেসবুক-টুইটারেও ছবিটি শেয়ার হয়েছে অসংখ্যবার।
সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর এক প্রতিবেদনে জানায়, উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মিসরের শেখ জায়েদ শহরের বাসিন্দা এই শিশু দুটি কয়েকদিন যাবত তাঁদের মায়ের অপেক্ষায় জেলখানার গেটে দাঁড়িয়ে আছে। সম্প্রতি দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একমাত্র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুরসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করায় গ্রেপ্তার করা হয় এই শিশু দুটির মা আয়া আলাকে।
মিসরীয় কর্তৃপক্ষ এ জন্য আয়া আলাকে মোট ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেছে। মাকে ছাড়া এই অবুঝ দুটি শিশু থাকতে পারছে না বাড়িতে। কিন্তু জেলখানায় গিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্যও মিলছে না অনুমতি।
গ্রেফতারের পর শিশুদের মা আয়া আলাকে মোট ১২ দিন পর্যন্ত হাজির করা হয়নি আদালতে। এমনকি প্রথমে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিও স্বীকার করেনি পুলিশ। পরে যদিও মুরসির মৃত্যুতে মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে শোক প্রকাশের দায়ে তাকে ১৫ দিনের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
এ দিকে কারাবন্দি আলার স্বামী পেশায় একজন সাংবাদিক। ২০১৫ সালে মিসরীয় পুলিশ তাকেও একবার গ্রেপ্তার করেছিল। সেবার তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। তখন স্বামীর মুক্তির জন্য আয়া আলা যে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন এবার আদালতে সেটিকেও অপরাধ হিসেবে দেখায় ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা সরকার।
আয়া আলার স্বামী আল কাবানি যখন কুখ্যাত তোরা জেলখানায় বন্দি ছিলেন তখনো বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য এই মেয়ে দুটি প্রায়ই কারাগারের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতো। যদিও চলতি বছরের শুরুতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এবার আর বাবার জন্য নয়, বরং মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য শিশু দুটি জেলখানার গেটে অপেক্ষা করছে। গত ১৭ জুন সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুরসির মৃত্যুর পর দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারাবন্দিদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করেছিল।
যে কারণে হামস ও হায়ার এই অপেক্ষার ছবি সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে আগের কথা। এক সময় বাবার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তারাই অপেক্ষা করতো এই জেলগেটে; আজ আবার মায়ের জন্য। পিতামাতার জন্য অপেক্ষার এই দুই ছবিকে এক সঙ্গে জুড়ে অনেকে আবার শেয়ার করেছেন অনলাইনে।
অপর দিকে দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, মিসরে বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজারের অধিক ভিন্নমতের জনগণকে জোরপূর্বক বন্দি বানিয়ে রেখেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসিকে অপসারণের মাধ্যমে সেনা শাসক সিসির ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে শুরু হয় এই দমন-পীড়ন অভিযান। পরবর্তীতে মুরসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করায় বিভিন্ন সময় অনেক নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি সংগঠনগুলোর।