উত্তাল কাতালোনিয়া : রাজপথে বিক্ষোভ করছেন হাজারো স্বাধীনতাকামী
স্পেনের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক রায়কে কেন্দ্র করে কাতালোনিয়ায় গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। ইউরোপের দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়ার পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতাকামী জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারও।
স্পেনের আঞ্চলিক রাজধানী বার্সেলোনায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় অনেককে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
গত সোমবার ৯ কাতালান বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেন স্পেনের সর্বোচ্চ আদালত। এর পর থেকেই এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে হাজারো কাতালান।
কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক সরকারের এক মুখপাত্র জানান, বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভের কারণ তাঁরা বুঝতে পারছেন এবং বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতি তাঁদের সহানুভূতি রয়েছে।
অন্যদিকে স্পেন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারা এই বিক্ষোভের হোতা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা কাতালোনিয়ার বিভিন্ন শহরের বিক্ষোভস্থলে যাওয়ার জন্য ‘সুনামি ডেমোক্রেটিক’ নামে একটি অ্যাপ ব্যবহার করছে।
বার্সেলোনায় বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টারত বিক্ষোভকারীদের হটাতে দাঙ্গা পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে এবং লাঠিচার্জ করে।
তিনজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নয়জন আহত বিক্ষোভকারীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
বার্সেলোনা ছাড়াও কাতালোনিয়ার গিরোনা ও তারাগোনা শহরে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
নতুন করে গণভোট আয়োজন করতে স্পেন সরকারকে বাধ্য করবেন বলে জানিয়েছেন কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক সরকারকে নিয়ন্ত্রণকারী স্বাধীনতাকামী নেতৃবৃন্দ।
যেভাবে বিক্ষোভের শুরু
২০১৭ সালে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে অবৈধভাবে গণভোট আয়োজনের ঘটনায় ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগে এসব নেতাকে গত সোমবার ৯ থেকে ১৩ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেন স্পেনের সর্বোচ্চ আদালত। এ ছাড়া আরো তিন নেতাকে অর্থদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১২ জনই তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেন স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়ার জনগণ। বিবিসির খবরে বলা হয়, রায়-পরবর্তী সময়ে বার্সেলোনার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিপুলসংখ্যক জনতা।
এদিকে আদালতের রায়ের পর কাতালোনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্লোস পুইগডেমন্টের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। বর্তমানে বিদেশে থাকা কার্লোস পুইগডেমন্ট এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, কাতালানরা ‘নিপীড়ন ও প্রতিশোধমূলক কৌশলের’ শিকার হচ্ছেন।
অপর দিকে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের দাবি, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জেরেই কাতালান নেতাদের সাজা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আদালতের রায়ের নিন্দা জানিয়েছে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা ও কাতালান ফুটবল ফেডারেশন। পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে ‘সংলাপ ও সমঝোতার’ আহ্বান জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ ও তাঁদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে কাতালোনিয়ায় সব ফুটবল ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কাতালান ফুটবল ফেডারেশন।