সিরিয়া-তুরস্ক সংঘাত বরদাশত করা হবে না : রাশিয়া
তুর্কি ও সিরীয় বাহিনীর মধ্যে সংঘাত বরদাশত করা হবে না বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে রাশিয়া। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্ক সামরিক অভিযান শুরু করার পরিপ্রেক্ষিতে এমন বার্তা দিল রুশ প্রশাসন।
সিরিয়ায় নিযুক্ত রাশিয়ার বিশেষ দূত আলেকজান্ডার লাভরেন্তয়েভ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘এটা (যুদ্ধ) কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর তাই আমরা এটা বরদাশত করব না।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, রাশিয়া সিরীয় নেতা বাশার আল-আসাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহযোগী।
২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন করে রেখেছে রাশিয়া। সিরীয় ও তুর্কি বাহিনীর ‘লাইন অব কন্ট্যাক্ট’ বা মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে রুশ সেনাদের টহল দেওয়ার কথা জানায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর পরই সিরিয়ার আইন ইসসা শহরের কাছাকাছি চলে আসা তুর্কি-সমর্থিত বাহিনীকে দমাতে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করার কথা জানায় পেন্টাগন।
তুর্কি-সমর্থিত যোদ্ধারা মার্কিন সেনাদের জন্য হুমকি না হওয়ার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়েছেন এক পেন্টাগন কর্মকর্তা।
এদিকে, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে দ্রুত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে মার্কিন আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সেখানে হামলা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যুদ্ধবিরতি বিষয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাতে তুরস্কে যাওয়ার পরিকল্পনা করার মুখে এমন মন্তব্য করলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
কুর্দি বাহিনীকে সীমান্ত অঞ্চল থেকে পিছু হটতে বাধ্য করতেই হামলা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে তুরস্ক। কুর্দি নেতৃত্বাধীন ‘সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস’ বাহিনীকে জঙ্গি সংগঠন মনে করে তুরস্ক।
আঙ্কারা আরো জানিয়েছে, তারা তুরস্কে বসবাসরত প্রায় ২০ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে একটি ‘সেফ জোন’ (নিরাপদ অঞ্চল) তৈরি করতে চায়। এই সেফ জোন সিরিয়ার প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। কিন্তু এসব শরণার্থীর মধ্যে বেশিরভাগই কুর্দি নয়। এর ফলে স্থানীয় কুর্দি জনগোষ্ঠী জাতিগত নিধনের শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা সেফ জোনের সমালোচকদের।
এদিকে, তুর্কি অভিযান মোকাবিলায় কুর্দিদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হওয়ার পর রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট সিরীয় বাহিনী এরই মধ্যে আরো উত্তরদিকে এগিয়ে এসেছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া থেকে তাদের সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকরা বলছেন, মার্কিন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের কারণেই সিরিয়ায় হামলা চালানোর ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছে তুরস্ক।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র এমন অভিযোগ বারবারই উড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুর্কি সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় ন্যাটো মিত্র দেশটির দুজন মন্ত্রীসহ তিন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, তুর্কি অভিযানে অনেক বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি হওয়ার পাশাপাশি এলাকাছাড়া হয়েছেন কমপক্ষে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ।