লাখো শৈশবের বিনিময়ে তৈরি আপনার হাতের স্মার্টফোনটি!

Looks like you've blocked notifications!
কঙ্গোর একটি কোবাল্ট খনিতে কাজ করছে শিশু শ্রমিকরা। ছবি : বিবিসি

ছোট্ট কিন্তু প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র- মুঠোফোন। আর এই মুঠোফোনের বদৌলতেই যেন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে বিশ্ব। প্রিয়জনের সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ এমনকি ব্যাংকিং থেকে শুরু করে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় অনেক কাজই এখন করা যায় স্মার্টফোনে। আর দিন দিন এই ছোট্ট ডিভাইসটির প্রাযুক্তিক উৎকর্ষ এতই বাড়ছে যে, জীবনটাই যেন বন্দি স্মার্টফোনে। 

আর স্মার্টফোনের রমরমা এই সময়ে বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানই নেমেছে মোবাইল প্রস্তুতকারকদের তালিকায়। আর এই তালিকায় থাকা নামি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল, স্যামসাং ও সনির বিরুদ্ধে উঠেছে শিশুশ্রমের অভিযোগ। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, মোবাইল ফোনসেট তৈরিতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কোবাল্ট উৎপাদিত হয় লাখো শিশুর শৈশবের বিনিময়ে। 

আফ্রিকান রিসোর্স ওয়াচের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির বরাত দিয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অ্যাপল, স্যামসাং ও সনির প্রযুক্তিপণ্যে ব্যবহৃত খনিজ শিশুদের দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে।  আর বেশির ভাগ খনিজ আসছে মধ্য আফ্রিকার দেশ রিপাবলিক অব কঙ্গো থেকে। 

জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) বরাতে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অন্ততপক্ষে ৫০ ভাগ কোবাল্ট উৎপাদন করে কঙ্গো। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটির খনিগুলোতে প্রায় ৪০ হাজার শিশু কাজ করছে। আর এদের মধ্যে অনেকে কোবাল্ট খনিতে করছে ৷ দেশটির কোবাল্ট খনিগুলোতে কাজ করা শ্রমিকরা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হয়।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কঙ্গোর দক্ষিণাঞ্চলের খনিগুলোতে কাজ করতে গিয়ে কমপক্ষে ৮০ জন প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। কোবাল্ট খনির ওপর তৈরি করা সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে সাত বছর বয়সী শিশুদেরও বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করতে দেখা গেছে।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী স্মার্ট ফোনে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে লিথিয়াম ব্যাটারি। এই ব্যাটারি তৈরির অত্যাবশ্যকীয় উপাদান কোবাল্ট।  বিশ্বের মোট কোবাল্টের অন্তত অর্ধেক আসে কঙ্গো থেকে।

কঙ্গোর এই কোবাল্ট খনিগুলোর কর্মী হচ্ছে শিশুরা। আর এদের বয়স সাত থেকে ষোল বছর।

এই প্রতিবেদন তৈরিতে খনিতে আগে কাজ করেছে এবং এখনো কাজ করছে এমন ৮৭ জন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে অ্যামনেস্টি। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু বলে জানিয়েছে বিবিসি। 

প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি দেখিয়েছে কীভাবে ব্যবসায়ীরা খনি  থেকে কোবাল্ট কিনে কঙ্গো ডংফ্যাং মাইনিংয়ের (সিডিএম) কাছে বিক্রি করছে। আর সিডিএম থেকে এসব কোবাল্ট চীনের ঝেজিয়াং হুয়াইউ কোবাল্ট লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে। প্রতিষ্ঠানটি এরপর কোবাল্ট প্রক্রিয়াজাত করে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাটারি তৈরি করে এমন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। আর এই কোম্পানিগুলোই অ্যাপল, মাইক্রোসফট, সামস্যাং, সনিসহ বিখ্যাত মোবাইল ফোনসেট নির্মাতাদের কাছে ব্যাটারি বিক্রি করে। 

এদিকে যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে তারা সবাই দাবি করেছে, শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে তারা।আর তাদের দাবি ‘সুনির্দিষ্ট' নয় বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার এই সংস্থা৷ অ্যাপল বলেছে, তাদের ব্যবহার করা কোবাল্ট কঙ্গো থেকে এসেছে কি না তা ‘খতিয়ে' দেখা হচ্ছে। একই সাথে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা।  মাইক্রোসফট আর স্যামসাং বলেছে, কোবাল্ট কঙ্গো থেকে এসেছে কি না, তা তারা ঠিক বলতে পারবে না।