পৃথিবীর ‘প্রথম যুদ্ধ’, পাথর যুগের হত্যাযজ্ঞ

Looks like you've blocked notifications!

কেনিয়ার তুর্কানা হ্রদের কাছে নাতারুক নামের এলাকায় কিছু কবরের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ২৭ জন মানুষকে এখানে কবর দেওয়া হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের দাবি, এসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আর এদের হত্যা করা হয়েছে আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বছর আগে!

সম্প্রতি দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের পর মানুষের গতিবিধি নিয়ে চলাফেরা করা গবেষকদের মাথা ঘুরে গেছে। এত দিন পর্যন্ত বেশির ভাগ গবেষক দাবি করেন আদি মানুষরা ছিল শান্তিপ্রিয় ও ঐক্যের প্রতীক। কিন্তু কেনিয়ার কবরগুলো বলছে অন্য কথা। সাড়ে ১০ হাজার বছর আছে মানুষ তার স্বজাতিকে যেভাবে মেরেছে তা জঘন্যতম বর্বরতাকেও হার মানায়।

বর্বরতার দৃষ্টান্তগুলো পড়ে নিন। হাড়গুলো দেখে গবেষকরা জানান, নিহত চারজনের হাত বাঁধা ছিল। এদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী ছিলেন। তাঁদের গলা কেটে হত্যা করা হয়। কয়েকজন মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তীক্ষ্ণ তীর। গবেষকরা জানিয়েছেন, ওই নারী ছয় থেকে নয় মাসের গর্ভবতী ছিলেন।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ২৭টি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে আটজন নারী এবং ছয়টি শিশু। এদের মাথা ভেঙে দেওয়া হয়, মুখ মণ্ডলের হাড় থেঁতলে দেওয়া হয়। এদের পাঁজরের হাড়ও ছিল ভাঙা। বেশির ভাগরেই মুখমণ্ডলের হাড় ছিল থেঁতলানো। লাঠি দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করে মুখমণ্ডলের হাড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একজনের চোখে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল ধারালো কিছু। এদের কাউকে কবর দেয়নি ঘাতকরা।  

কঙ্কাল উদ্ধারকারী গবেষকদের একজন ড. মার্তা মিরাজন বলেন, ‘দলের মধ্যে সহিংসতার অন্যতম সাক্ষী হয়ে থাকবে নাতারুকের এ হত্যাকাণ্ড।’ তিনি আরো বলেন, ‘বোঝাই যাচ্ছে ঘাতকরা ইচ্ছে করেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এমনকি মৃতদেহগুলো মাটি চাপা পর্যন্ত দেয়নি।  প্রাগৈতিহাসিক যুগে কেবল শিকারের সন্ধানে ব্যস্ত থাকা দলবদ্ধ মানুষের এটা দলবদ্ধ সম্পর্কেরই একটা অংশ।’

ড. মার্তা আরো বলেন, ‘ঘটনা দেখে যা মনে হচ্ছে, এ হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল খাবার দখল করা। অর্থাৎ অন্য একটা দল আরেকটা দলের সংগ্রহ করা খাবার দখলে নিতে গিয়ে এ কাজ করে। এ কারণে নারী ও শিশুরা সহিংসতার শিকার হয়েছে। যারা মূলত খাবার সংগ্রহে রাখার কাজটি করত। যাদের হাত ধরেই পরে কৃষিকাজ শুরু হয়।      

গবেষকদের একজন অধ্যাপক রবার্ট ফলে। তিনি বলেন, নিঃস্বার্থ ও সহযোগিতা করার পাশাপাশি সহিংসতাও মানবচরিত্রেরই একটা অংশ। সন্দেহ নেই মানুষের রক্তেই আছে আগ্রাসী ও প্রাণঘাতী হয়ে যাওয়া আবার গভীর ভালোবাসা ও যত্নশীল হওয়া। এটা একটা মুদ্রারই এপিঠ-ওপিঠ।’