ব্যাংকে রাখলে টাকা কমবে জাপানে!
সাধারণত বিশেষ কোনো প্রয়োজনের জন্য উদ্বৃত্ত অর্থ জমাতে মানুষ ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়। এ ছাড়া জমানো টাকার পরিমাণ আরো বাড়াতে বিভিন্ন স্কিমে অর্থ বিনিয়োগ করে মানুষ। বিশ্বের সব দেশেই ব্যাংকগুলো গ্রাহক আকর্ষণের জন্য জমানো অর্থের ওপর দারুণ সব লভ্যাংশের অফার দিয়ে থাকে।
তবে ব্যতিক্রম ঘটেছে জাপানে। দেশটির ব্যাংকে অর্থ রাখলে এখন আর তার পরিমাণ বাড়বে না, উল্টো কমবে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রাহকদের আমানতের ওপর শতকরা শূন্য দশমিক ১ ভাগ ঋণাত্মক চার্জ আরোপ করেছে।
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির বর্তমান মন্দা কাটানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকও ঋণাত্মক হার চালু করেছিল। তবে জাপান এবারই প্রথম এই হার চালু করল।
জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলতি বছরের প্রথম বৈঠকে ৫-৪ ভোটের ব্যবধানে এই হার আরোপের সিদ্ধান্ত পাস হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘প্রয়োজনের খাতিরে ব্যাংক অব জাপানের সুদের হার ঋণাত্মক হারে কমানো হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশ অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এই হার অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নতুন তথ্য প্রকাশ করা হয়। গেল ডিসেম্বরে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল শূন্য দশমিক ১ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম।
এদিকে, এ ঘোষণার পর এশিয়ার শেয়ারগুলোর দাম বেড়ে গেছে আর কমেছে জাপানের মুদ্রা ইয়েনের মান।
নতুন এই নীতি কাজে আসবে কি না, তা নিয়ে এরই মধ্যে সংশয় প্রকাশ করতে শুরু করেছেন অর্থনীতিবিদরা। টোকিওর ফুজিৎসু ইনস্টিটিউটের মার্টিন শুইলজ বিবিসিকে বলেন, ‘ব্যাংক অব জাপানের হাতে থাকা শেষ অস্ত্রটি ছিল ঋণাত্মক সুদের হার আরোপ করা। তবে এর প্রভাব কতটুকু দৃঢ় হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
ইউরোজোনের কথা উল্লেখ করে মার্টিন শুইলজ সতর্ক করে বলেন, সেখানে এই সুদের হার আরোপ করা হয়েছিল অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করতে। সে হিসেবে জাপানে একটি ধীরগতির অর্থনৈতিক পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। জাপানে আমানত বাড়ছে না, এর কারণ এটা নয় যে ব্যাংকগুলো ধার দিতে চায় না; বরং ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক থেকে ধার নিতে ইচ্ছুক নন। তাই সুদের হার ঋণাত্মক করে দিলেও যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না।
শুইলজ আরো বলেন, ‘ব্যবসা অর্থ চায় না। এর জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগের সুযোগ। আর সেটা পাওয়া সম্ভব কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে। আর্থিক নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে নয়।’