যে নির্বাচন নারী-পুরুষ-শিশুদের করেছিল ধর্ষণের শিকার

নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায়ই ঘটে থাকে। ২০০১ ও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনের পর সহিংসতা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে ২০০৭ সালে কেনিয়ার সাধারণ নির্বাচনের পর যা হয়েছিল, তার বীভৎসতা হয়তো সবকিছুকেই হার মানাবে। হিউম্যান রাইট ওয়াচের নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর জানা গেছে প্রায় নয় বছর আগের সেই বীভৎস সহিংসতার কথা।
২০০৭ সালে কেনিয়ার সেই নির্বাচনে এতই ধোঁয়াশাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে ভোট গ্রহণের পর দেশটির প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘আমি জানি না কে নির্বাচনে জিতেছে।’ ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তাঁর এমন মন্তব্যের পরেই ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। দেশটি চলে যায় গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। দুই মাস ধরে চলা এই সহিংসতায় নিহত হন এক হাজার ২০০ মানুষ। স্থানচ্যুত হতে হয় সাড়ে তিন লাখ মানুষকে।
নয় বছর আগে যে ভয়ানক সহিংসতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, তার স্মৃতি এখনো কষ্ট দেয় কেনিয়ার অনেক মানুষকে। ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ জানিয়েছেন, তাঁর সামনেই গণধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁর মেয়েকে। এরপর দুর্বৃত্তরা তাঁকেও জোর করেছিল নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করার জন্য। এতে বাধা দেওয়ায় তাঁকেও ধর্ষণ করা হয়। আরেক নারীকে এত গুরুতরভাবে আহত করা হয় যে, তাঁর মস্তিষ্ক চিরস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঁচ সন্তানের মা ৫৩ বছর বয়সী আপিয়ো বলেছেন, ‘আমি শান্তিতে নেই। অনেক দিন ধরেই আমার তলপেট ও পিঠে তীব্র ব্যথা করে। আমি খুবই লজ্জার মধ্যে দিন কাটাই। আমার জীবনে কোনো আশা নেই। আমি শুধু বসে থাকি আর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করি।’ এই হতভাগ্য মানুষগুলোর মতো সে সময় কেনিয়ার অনেক নারী-পুরুষ ও শিশুকে হতে হয়েছে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার।
২০০৭ সালের ডিসেম্বরে কেনিয়ার বিতর্কিত এই নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন পার্টি অব ন্যাশনাল ইউনিটির (পিএনইউ) মাওয়াই কিবাকি। ভোটের এই ফল মেনে নিতে না পেরে কিবাকির সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল বিরোধী রাজনৈতিক দল অরেঞ্জ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের সমর্থকরা। পরে দুই পক্ষই জড়িয়ে পড়েছিল ভয়াবহ সংঘর্ষে।
ভয়াবহ এই সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জন রাজনীতিবিদকে চিহ্নিত করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ না থাকায় কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।