মাহফুজ আনামকে হয়রানি না করার আহ্বান
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামকে হয়রানি না করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)।
গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় সংবাদকর্মীদের এই সংগঠন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি মাহফুজ আনাম স্বীকার করে বলেন, দেশের অনেক টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মতো তিনিও ২০০৭ সালে শেখ হাসিনার দুর্নীতি-সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে যাচাই না করেই প্রকাশ করেছিলেন। এসব তথ্য তাঁকে এবং বাংলাদেশের অন্য গণমাধ্যমে সরবরাহ করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যারা ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শেখ হাসিনা ২২ ফেব্রুয়ারি এক বক্তব্যে মাহফুজ আনামকে পদত্যাগ করতে বলেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সম্পাদক হিসেবে মাহফুজ আনামের ভুলের কারণে সে সময় তাঁকে কারাবরণ করতে হয়।
স্পষ্টভাষী এবং সমালোচক এই সংবাদপত্রটির ভুলের সুযোগ নিয়ে মাহফুজ আনামের নিন্দা জানাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলেছেন শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি মাহফুজ আনামকে নজিরবিহীনভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশের ৫৩ জেলায় মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে অন্তত ৭৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি দায়ের হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে। এসব মামলায় তিন বছরের সাজার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া মানহানির অভিযোগে করা হয়েছে আরো ৬২টি মামলা, যার জন্য সাজা হতে পারে অন্তত দুই বছর। মানহানির দণ্ড হিসেবে সব মিলিয়ে এক লাখ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। অবশ্য এসব মানহানির কোনো মামলাই শেখ হাসিনা নিজে দায়ের করেননি।
আরএসএফের এশিয়া-প্যাসিফিক ডেস্কের প্রধান বেঞ্জামিন ইসমাইল বিবৃতিতে বলেন, ‘এখানে অনেকটা বিনা বিচারেই সাজা দেওয়া হচ্ছে, যা দিচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি কি না তাঁর দেশের গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সম্মানের দাবি করেন। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
ইসমাইল আরো বলেন, ‘বিচারের দাবিতে আইনকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এখানে বিষয়টা শুধু সংবাদপত্রের নীতিমালাবিষয়ক। যেহেতু মাহফুজ আনাম সংবিধান লঙ্ঘন করেননি, সেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা কোনোভাবেই উচিত নয়। আওয়ামী লীগের এটা বোঝা উচিত, গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দল হচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। এ ছাড়া গণমাধ্যমকে দমন করতে চাওয়া হলো সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
গত ৪ ফেব্রুয়ারি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে মাহফুজ আনাম বলেন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিআইএফ) সরবরাহ করা তথ্য যাচাই না করেই সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাঁর পত্রিকায় প্রকাশ করেন, যা তাঁর উচিত হয়নি বলেও ওই টক শোতে মন্তব্য করেন মাহফুজ আনাম।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ও বাংলাদেশের সর্বাধিক পঠিত বাংলা দৈনিক প্রথম আলো একই মালিকানার প্রতিষ্ঠান, যারা বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সমালোচনামূলক সংবাদ প্রকাশ করে।
আরএসএফ জানিয়েছে, ছয় মাস ধরে গ্রামীণফোনসহ দেশটির বিভিন্ন বড় বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানকে এই সংবাদপত্র দুটিতে বিজ্ঞাপন না দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে ডিজিএফআই। ডেইলি স্টারে প্রকাশিত চট্টগ্রামে সেনাসদস্যদের করা অপরাধবিষয়ক এক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই এ নির্দেশ দেয় ডিজিএফআই।