ঋণ পেতে পরামর্শক সংস্থা নিয়োগ

চরম অর্থসংকটে সৌদি আরব

Looks like you've blocked notifications!
সৌদি আরবের একটি তেলক্ষেত্র। ছবি : ব্লুমবার্গ

গত কয়েক বছরে অব্যাহতভাবে তেলের দাম কমার কারণে চরম অর্থসংকটে পড়েছে সৌদি আরব। বাজেট ঘাটতির মুখে পড়ে দাতাদের কাছে ঋণ চেয়েছে সৌদি সরকার। দেশটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ব্লুমবার্গ গতকাল শুক্রবার এ খবর প্রকাশ করেছে।

এদিকে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকা জানায়, দাতাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সৌদি সরকারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা ‘ভেরাস পার্টনার্স’। তবে এ বিষয়ে ‘ভেরাস পার্টনার্সের’ কোনো মুখপাত্রের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়, আসন্ন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণে ছয় থেকে আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পেতে বিদেশি পরামর্শক সংস্থা নিয়োগ দিয়েছে দেশটির অর্থবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ঋণ দিতে আগ্রহী দাতা সংস্থা ও দেশের কাছে সৌদি আরবের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। এ ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর হবে বলেও জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণের পরিমাণ প্রয়োজনে বাড়ানোর সুযোগ রাখারও উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়।

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ঋণ নিয়ে ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশা করছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় ও ব্যাংক কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে আরো অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে সৌদি আরবের।

এদিকে, সৌদি আরবের এই ঋণ নেওয়াকে ভবিষ্যতের কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এনার্জি পলিসি রিচার্স ফাউন্ডেশনের পরিচালক ল্যারি গোল্ডস্টেইন। তিনি বলেছেন, শুধু ব্যয় নির্বাহের জন্য সৌদি সরকার দাতাদের কাছে ঋণ চাইছে না। কঠিন ও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার কৌশলের অংশ হিসেবে সৌদি আরব এ ঋণ নিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন গোল্ডস্টেইন।

উল্লেখ্য, আর্থিক সংকটে পড়ে সাম্প্রতিক সময়ে দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে পারস্য উপসাগর অঞ্চলের দুই দেশ ওমান ও কাতার।

বিদায়ী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করেছিল, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমাগত কমতে থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ সৌদি আরব পাঁচ বছরের মধ্যে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।

আইএমএফের ‘মিডল ইস্ট ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে বলে, ওই বছরে সৌদি আরবের বাজেট ঘাটতি ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছর বাজেট ঘাটতি হতে পারে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ।

এতে স্পষ্ট যে, ব্যয় নির্বাহের জন্য আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে সৌদি আরবের। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে ৬৫৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে।

সংকট উত্তোরণে এরই মধ্যে কৃচ্ছ্র কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার। বিভিন্ন খাতে ব্যয় সংকোচনের পাশাপাশি ভর্তুকি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।

গেল শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে ইরাক যুদ্ধ, ইরানের সঙ্গে বৈরিতা, প্রতিবেশী ইয়েমেনে গোষ্ঠীগত সংঘাতে ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ সমর্থন, রাজকীয় শাসনব্যবস্থা অটুট রাখতে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর ফলে বাজেট ব্যয় বাড়ছিল দ্রুত। কিন্তু এর ঠিক বিপরীত চিত্র আয়ে। কয়েক বছর ধরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়তে থাকায় সংকুচিত হতে থাকে আয়ের উৎস।

বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে দাঁড়ায় ৩০ মার্কিন ডলারে। এতে আর্থিক সংকটে পড়ে তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি। সৌদি আরবের আয়ের ৯০ শতাংশই আসে তেল রপ্তানি থেকে। ফলে মন্দার বাজারে অভ্যন্তরীণ ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশটির রিজার্ভ দ্রুত উবে যাচ্ছে।

দরপতনেও জ্বালানি তেলের উৎপাদন না কমানোয় মনে করা হচ্ছে, দাতাদের কাছ থেকে ঋণের টাকায় বাজেট ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি সরকার। জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকায় তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক সদস্যরা বারবার চাপ দিলেও সৌদি আরব রাজি হয়নি। সদস্যদের যুক্তি হচ্ছে, উৎপাদনের পরিমাণ কমালে বাজারে জ্বালানি তেলের দাম উঠতে শুরু করবে।