কুয়েতে ইকামার জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ এক বছর, বিলম্বে জরিমানা

Looks like you've blocked notifications!
কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। ছবি : এনটিভি

কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশিদের হাতে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঁচ বছর আগে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়া শুরু হয়েছিল। শুরু থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত কুয়েত থেকে এমআরপি নেন ২৪ হাজার ১৩০ জন। আর ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত এমআরপি নিয়েছেন ৪৪ হাজার ১৪১ জন।

তবে কুয়েতপ্রবাসীদের এমআরপি নেওয়ার সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। কারণ অনেকে দেশে ছুটিতে থাকা অবস্থায় এমআরপি নিয়েছেন। এমন ব্যক্তিদের তথ্য দূতাবাসের না থাকলেও এই সংখ্যা কয়েক হাজারের কম নয়।

কুয়েতের রেসিডেন্সি আইনের ১২ ও ১৫ ধারায় উল্লেখ করা আছে, যারা পাসপোর্ট নবায়ন করে কিন্তু ইমিগ্রেশন বিভাগে নিবন্ধন করে না, তাদের আইন লঙ্ঘনকারী হিসেবে দিনে দুই দিনার হারে জরিমানা গুনতে হয়। কুয়েতে কোনো প্রবাসীর ইকামা থাকা অবস্থায় পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সেটা নবায়ন করলে ওই নবায়নকৃত বৈধ পাসপোর্টে এক মাসের মধ্যে ইকামা স্থানান্তর করার পাশাপাশি ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট নতুন তথ্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এটি না করা হলে আইন লঙ্ঘনকারী হিসেবে জরিমানা দিতে হয়। স্থানীয় সরকারের এই আইনটি না জানা থাকায় গত বছর দেশটিতে এক লাখ সাত হাজার মানুষকে এই জরিমানা দিতে হয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিও ছিলেন।

কুয়েতের সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে দেশটিতে ভিসা নবায়ন করতে পাসপোর্টের মেয়াদ সর্বনিম্ন এক বছর থাকতে হবে এমন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্যমতে, দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশি ৬৮ হাজার ২৭১ জনের পাসপোর্ট দ্রুত নবায়ন করা প্রয়োজন।

কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রধান কাউন্সিলর এস এম মাহবুবুল আলম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কুয়েতে দুই লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন। এদের মধ্যে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালে জুন পর্যন্ত ২৪ হাজার ১৩০ জন, ২০১২ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৪৪ হাজার ১৪১ জন, ২০১৩ জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ১৪২ জন, ২০১৪ জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ২৯ হাজার ১৮২ জন, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ হাজার ৯১৯ জন, মোট এক লাখ ৫৬ হাজার ৫১৪ জন কুয়েত থেকে পাসপোর্ট এমআরপিতে রূপান্তর করেন। বাকিদের বড় একটি অংশ প্রায় ৪০ হাজার প্রবাসী বিভিন্ন সময়ে দেশে ছুটিতে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে এমআরপি গ্রহণ করেন।

প্রধান কাউন্সিলর এস এম মাহবুবুল আলম আরো বলেন, দূতাবাসে আটজনের মতো স্টাফ ডাটা আপডেট, ছবি তোলা, স্ক্যানিংসহ পাসপোর্টের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন। নতুন ও পুরোনো এমআরপি আবেদনগুলো প্রতিদিন ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর নবায়নের জন্য আবেদনকৃত একটি পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ দেওয়া হয় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এই ব্যবধান সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান কাউন্সিলর এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, দৈনিক হিসেবে এই সময় ৬০ দিন। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন ছুটির কারণে সময় হয় মাত্র ৪০ দিন। দুই মাসে দুই দেশের সাপ্তাহিক ও জাতীয় ছুটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অফিসসহ দূতাবাস বন্ধ থাকে অন্তত ২২ দিন। বর্তমানে চার থেকে ছয় সপ্তাহের মতো লেগে যায় একটি পাসপোর্ট বিলি করতে। ঢাকা থেকে তৈরি হয়ে কুয়েতে আসতে যে সময়টুকু লাগে সেটাই তাঁরা নেন, অনেক সময় আগে চলে আসলে তাঁরা ফোন করে গ্রাহককে জানিয়ে দেন।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান কাউন্সিলর এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমান সরকার নতুন পাসপোর্ট পাঁচ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর করার কাজ শিগগিরই শুরু করবে। কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের বর্তমান রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে কুয়েতপ্রবাসীদের সমস্যার কথা বিভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। অনেক প্রবাসী পাসপোর্টের নতুন আইন সম্পর্কে জানেন না। তবে বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা তাঁদের শ্রমিকদের পাসপোর্টের বিষটি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। তাঁরাও মনে করেন সবাইকে আইন সম্পর্কে জানাতে হবে। এই বিষয়ে শুধু দূতাবাস না সব সচেতন প্রবাসী সবাইকে জানাতে হবে। তাঁরা যেন সম্পূর্ণ দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে পাসপোর্টের বিষয়ে নিজেও অবগত থাকেন। মাহবুবুল আলম পাসপোর্ট  সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দূতাবাস বিভিন্ন প্রচারণা শুরু করেছে বলে জানান।

বাংলাদেশ সরকারের কাছে কুয়েত প্রবাসীদের দাবি পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করাসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা সবাইকে প্রবাসীদের পাসপোর্ট দ্রুততম সময়ে বিলি করানোর উদ্যোগ নেওয়া।