বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

ফিলরেমের লাইসেন্স বাতিল

Looks like you've blocked notifications!

নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থ স্থানান্তরে সহায়তা করার অভিযোগে ফিলিপাইনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে ওয়াশিংটন পোস্ট গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ফিলিপাইনের অর্থপাচারবিরোধী অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) গত ২৮ এপ্রিল ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশন নামের রেমিট্যান্স কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছে। লেনদেনের তথ্যের ব্যাপারে অস্পষ্টতা এবং ফিলিপাইনের একাধিক ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থ সরিয়ে ফেলা ও অন্য দেশের মুদ্রায় রূপান্তরের অভিযোগ রয়েছে ফিলরেমের বিরুদ্ধে।

ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং তদন্তকারীরা বলেছেন, বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ লেনদেনে ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা ছিল। তবে ফিলরেম এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাকড করে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রিজার্ভ ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা ৯৫১ মিলিয়ন ডলার চুরির চেষ্টা করে। পরে বেশ কিছু পেমেন্ট বন্ধ করে দিয়ে বেশির ভাগ অর্থ চুরি ঠেকানো গেলেও ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে সক্ষম হয় হ্যাকাররা। এর মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ফিলিপাইনে স্থানান্তরে সক্ষম হয় তারা।

ফিলিপাইনে পাচার হওয়া ওই অর্থ দেশটির রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার ব্রাঞ্চের চারটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। পরে তা চলে যায় জুয়ার আসরে (ক্যাসিনোতে)।

এই প্রেক্ষাপটে গত ২৮ এপ্রিল অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল ফিলরেমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আনে।

অভিযোগে বলা হয়, ক্যাসিনোতে যাওয়ার আগে চুরি হওয়া টাকার ভুয়া লেনদেন, ফিলিপাইনের ব্যাংকের ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে স্থানান্তর ও লোপাটের পেছনে এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে।

এই চুরি যাওয়া অর্থ কীভাবে হাতবদল হয়েছে, তার একটা মোটামুটি চিত্র দিয়েছে ফিলিপাইনের ডেইলি ইনকোয়ারার পত্রিকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে এই অর্থ তাদের ক্লায়েন্টদের মাধ্যমে চলে যায় স্থানীয় এক ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর কাছে। ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানীয় মুদ্রায় বিনিময়ের পর এই পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭০ কোটি পেসোতে। এরপর এই অর্থ চলে যায় তিনটি বড় ক্যাসিনোতে। এগুলো হচ্ছে সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো, সিটি অব ড্রিমস ও মাইডাস।

পুরো অর্থ খরচ করে সেখানে জুয়া খেলার জন্য চিপস কেনা হয়েছে। এরপর জুয়া খেলে এই চিপস আবার ফিলিপিনো মুদ্রায় রূপান্তর করা হয়েছে। এরপর সেই অর্থ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে হংকংয়ের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে। এই ঘটনা এত দেরিতে জানা গেল কেন সেটি এক বিরাট রহস্য। এত বড় একটা কেলেঙ্কারি, এত বিশাল অঙ্কের অর্থ চুরি হলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অথচ তা জানা গেছে মাত্র গত কদিন আগে। এবং তাও ফিলিপাইনের বিভিন্ন পত্রিকায় এ নিয়ে খবর বেরুনোর পর।

ফিলিপাইনের পত্রিকাগুলোতে বলা বলছে, অর্থ চুরি হওয়ার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা এরই মধ্যে ফিলিপাইনে গিয়ে সেখানকার সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা পাচার হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এসবই কিন্তু ঘটেছে পুরো বিষয়টি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের নজরে আসার আগে।

তবে ফিলিপাইনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফিলরেম বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে বিচারকাজ শুরু হওয়ার পর সম্প্রতি এ নিয়ে ফিলরেমের আর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।