মুহূর্তেই ধসে পড়ল হাজার বছরের ইতিহাস

Looks like you've blocked notifications!
ভূমিকম্পে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের চারণক্ষেত্র নেপালের কাঠমাণ্ডুর ভক্তপুরে সপ্তদশ শতকে নির্মিত দরবার স্কোয়ারের অনেক ভবনের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে নওতলে দরবার নামে একটি ভবন পুরোপুরি ধসে যায়।ছবি : এএফপি ও স্কাইনিউজ

হিমালয়কন্যা নেপালের সাজানো শহর কাঠমান্ডু। পরিপাটি, ছিমছাম এ নগরটি দেশটির রাজধানীও। রাস্তার পাশে ফুলের ঝাড়, সুদৃশ্য ল্যাম্পপোস্টের আলো, প্রাচীন রাজপ্রাসাদ, ঐতিহাসিক মন্দির আর সাজানো দোকানপাট। স্থানীয় তরুণ-তরুণী আর বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে কাঠমান্ডু থাকে সব সময়ই মুখর।
 
হিমালয়ের কোলের নেপাল শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, ঐতিহ্যের রাজধানী হিসেবেও এর খ্যাতি বিশ্বজোড়া। দেশটিতে ইউনেসকো ঘোষিত ‘বিশ্ব-ঐতিহ্য’ ১৩৭টি। তার ১১৪টিই আবার কাঠমান্ডুতে।

পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় সাজানো সেই শান্ত শহরটি আজ মুখ থুবড়ে পড়ল। শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে কাঠমান্ডুসহ পুরো দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪১ মিনিটে শুরু হওয়া ২০ সেকেন্ড থেকে দেড় মিনিট স্থায়ী এ ভূকম্পনে ধসে পড়েছে শত শত বছর বয়সী বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

নেপালের বৌদ্ধনাথ স্তূপের অন্তত চারটি স্তূপ ও নাগার্জুন পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বালজু ওয়াটার গার্ডেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবতা শিবের সবচেয়ে পবিত্র মন্দির হিসেবে গণ্য ৪০০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি পশুপতিনাথ মন্দির ও কালো পাথরে খোদাই করা বিশাল বিষ্ণুমূর্তি বুধানীল কণ্ঠেরও আংশিক ক্ষতি হয়েছে ভূমিকম্পে।
 
নেপালের তথ্যমন্ত্রী মিনেন্দ্র রিজাল জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে চতুর্থ থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত নির্মিত প্রাচীন ভবনগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কাঠমান্ডু থেকে আট কিলোমিটার দূরে ভক্তপুরে চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতকে নির্মিত দরবার স্কোয়ারের একটি ভবন ধসে পড়েছে। এ ছাড়া কাঠমান্ডুতে ১৯ শতকের প্রথমার্ধে নির্মিত ধারাহারা টাওয়ার নামে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনাও ধসে গেছে। স্থাপনা দুটি থেকে অন্তত ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে আটকে রয়েছেন অন্তত ৫০ জন মানুষ।
 
তথ্যমন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, অনেক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কাঠমান্ডুর সাথে দেশের যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। এ ছাড়া কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কাঠমান্ডুর আশপাশে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভবন ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্কাইনিউজ জানায়, ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ভবন ধারাহারা টাওয়ার নেপালে ভীমসেন টাওয়ার নামেও পরিচিত। ভূমিকম্পে কাঠমান্ডু সুন্দারার ২০৩ ফুট উচ্চতার এ টাওয়ার পুরোটাই ভেঙে পড়ে।
 
১৮২৪ সালে দেশটির রানি ললিতা ত্রিপুরা সুন্দরীর আদেশে এই টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ওই সময় সেনাবাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতো এটি। নেপালের পর্যটন স্থানগুলোর অন্যতম ছিল এই টাওয়ার।

ঐতিহ্যবাহী এই টাওয়ারে ছিল মোট ২১৩টি ধাপ। টাওয়ারটির অষ্টম তলায় গোলাকৃতির একটি পাটাতন ছিল, যেখান থেকে পুরো কাঠমান্ডুর দৃশ্য দেখা যেত। ২০০৫ সাল থেকে টাওয়ারটি সাধারণের প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল।

ভূমিকম্পে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের চারণক্ষেত্র ভক্তপুরে সপ্তদশ শতকের দরবার স্কোয়ারের অনেক ভবনের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে নওতলে দরবার নামে একটি ভবনটি পুরোপুরি ধসে গেছে। এ ছাড়া দরবার স্কোয়ারের তালেজু টেম্পল, কাল ভৈরব, করোনেশন চক, রাজা প্রতাপ মল্লর মূর্তি, বিগ বেলের ক্ষতি হয়েছে বলে দরবার স্কোয়ারের সূত্রে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যমটি। 
এ ছাড়া লামজুং ও পোখরার বিখ্যাত বিনোদনকেন্দ্র সিটি অব অ্যাডভেঞ্চারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

আজ শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ১১ মিনিটে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে নেপাল, ভারত, চীন ও বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ভূকম্পন জরিপ সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের (ইউএসজিএস) তথ্যমতে, ভূকম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল নেপালের লামজুং। রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের মাত্রা ৭ দশমিক ৮। যদিও সংস্থাটি প্রথমে ওই মাত্রা ৭ দশমিক ৫ বলে জানিয়েছিল। ভূমিকম্পের পর থেকে বিকেল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৭টি আফটার শক অনুভূত হয়েছে।