ফরাসি সেনাদের বিরুদ্ধে শিশু ধর্ষণের অভিযোগ

Looks like you've blocked notifications!
মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের একটি দৃশ্য। যেখানে সড়কের পাশে দাঁড় করে রাখা হয়েছে সাজোয়াঁ যান। ছবি : এএফপি

মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত ফরাসি সেনাদের বিরুদ্ধে শিশুদের ওপর যৌননিপীড়ন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর ফ্রান্স বিষয়টি তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেনারা খাবার ও অর্থের লোভ দেখিয়ে আট শিশুকে ধর্ষণ করেছে। 

ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, গত বছরের জুলাই মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ফ্রান্স সরকারের কাছে অভিযোগ করে যে, সেনারা শিশুদের ওপর যৌননির্যাতন চালিয়েছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই তদন্ত শুরু হবে বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়। 

সত্য খুঁজে বের করা হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করে ফরাসি সরকার। 

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুন মাসের মধ্যে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বাঙ্গুইয়ে উদ্বাস্তুদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ১০ শিশুর ওপর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার তদন্তকারীরা শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর প্রমাণ পেয়েছেন। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ফাঁস করার অভিযোগে মানবাধিকার কমিশনের এক কর্মীকে বরখাস্তও করা হয়েছে। 

ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনটি ব্রিটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক সংগঠন এইডস ফ্রি ওয়ার্ল্ড।

শিশুরা খাবার খুঁজছিল
এইডস ফ্রি ওয়ার্ল্ডের সহপরিচালক পলা ডোনোভান জানান, প্রতিবেদনে ছয়জন শিশুর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যাদের বয়স আট থেকে ১৫ বছর। তারা বলেছিল, ফ্রান্সের সেনারা তাদের জিজ্ঞেস করেছিল খাবার লাগবে কি না। 

পলা এএফপিকে  বলেন, শিশুদের খিদে পেয়েছিল আর তারা ভেবেছিল ওই সেনাদের কাছ থেকে তারা খাবার পাবে। কিন্তু সেনারা বলেছিল, ‘তোমরা যদি এটা করো, তো আমি তোমাদের খাবার দেবো।’
গত বছর দেশটিতে যুদ্ধ ও অস্থিরতার কারণে অন্তত ১০ হাজার শিশু  ঘরছাড়া হয়। 

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রতিবেদনটি ফাঁস করার দায়ে সুইডেনের নাগরিক ও জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার কর্মী আঁদ্রে কমপাসকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অভিযোগ পাওয়ার পর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি প্রতিবেদনটি ফরাসি সরকারের হাতে তুলে দেন। 

তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতিসংঘ ও মানবাধিকার কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখার আগেই কমপাস এই গোপন প্রতিবেদন ফাঁস করে দেন। এমনকি অনেক কর্মকর্তা ফাঁস হওয়ার পরে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। 

কোনো ছাড় নয়
সুইডিশ নাগরিক কমপাসের ছাঁটাইয়ের খবর সম্পর্কে অবগত আছে সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, ‘শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালানোর বিষয়টিতে জাতিসংঘ কোনো ছাড় দিতে পারে না। দায়ীদের খুঁজে বের করে সাজা দিতে হবে।’ 

২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে শুরু হওয়া সহিংসতায় কমপক্ষে চার লাখ ৬০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে গেছে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যমতে, দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। যদিও দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। সাবেক ইউরোপীয় দখলদারিরা বছরের পর বছর ধরে দেশটি লুট করে চলেছে।