যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি খর্ব করার সুযোগ সন্ধানে চীন
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী স্লোগান ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ এবং চীনের জনপ্রিয় প্রবাদ চীনা জাতির মহানবজাগরণ এবং ‘চায়না ড্রিম’ এখন সমান্তরালে চলে এসেছে।
ট্রাম্প যখন তার বিজয় পরবর্তী ভাষণ দিচ্ছিলেন ঠিক সে সময়ে চীনা গণমাধ্যমগুলো একটি মহাকাশ অভিযান সম্পর্কে ব্যাপক কাভারেজ দিচ্ছিল। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফল প্রকাশের দিনটিকেই চীনের মহাকাশচারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বেছে নিলেন।
মূলত চীনের জনগণকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এটা তাঁর বার্তা যে পৃথিবীর যেখানে যাই ঘটুক না কেন, চীনা মহাশক্তির উত্থান সঠিক পথেই রয়েছে। তবে, একান্তে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও হয়তো আমেরিকার জয় উদযাপন করছেন।
যেহেতু অনেকেই অতীতে বলেছে যে, আমেরিকার নির্বাচনী দৌড় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি একটি উপহার হিসেবেই এসেছে। একটি বৃহৎ একদলীয় রাষ্ট্র যেখানে এর রাষ্ট্রব্যবস্থার শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে জনগণের মতামতকে কোনো মূল্যই দেয় না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে সেসব ক্ষেত্রে বস্তুগতভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর বলে অব্যক্ত ‘বেঞ্চমার্ক’ হিসেবে ধরা হয়।
এটা কোনো দুর্ঘটনা নয় যে রাষ্ট্রপতি শি-এর ‘চায়না ড্রিম’ স্লোগান ‘আমেরিকান ড্রিমে’র প্রতিধ্বনি। একটি ক্রমবর্ধমান পরাশক্তির (চীন) জন্য যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ যাকে পরাজিত করতে হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে এসেছেন যে, আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন যুদ্ধের ফলে চীনের আস্থায় চিড় ধরেছে; যুক্তরাষ্ট্র ভূরাজনীতিতে নেতৃত্বে দিতে পারত। বিশ্ব অর্থনীতিতেও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিতে পারত, কিন্তু ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এ ব্যাপারে চীন আস্থা হারিয়েছে।
এখন মার্কিনরা যে নিজেরাই তাদের পরিচালনা করতে সক্ষম হবে, একটা তিক্ত ও কলঙ্কময় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চীনের সে আস্থাকেও বিনষ্ট করেছে।
যদিও এ নির্বাচনের প্রার্থী বা প্রচারণা সম্পর্কে চীনা সরকার সরাসরি কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছে, দেশটির শক্তভাবে নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম এ নির্বাচন এবং বিভক্ত প্রতিযোগিতার প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে।
অনেক চীনা নাগরিক ট্রাম্পকে একজন ব্যবসায়ী, স্পষ্ট বক্তা এবং একজন বহিরাগত হিসেবে প্রশংসা করেছেন। যদি এখন থেকে চার বছর পর ‘আমেরিকাকে আবারও পরাক্রমশালী’ করতে পারেন তবে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাকে গড়ে তুলেছে তা কিছুটা বাহবা পেতে পারে।
নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ট্রাম্প চীনের সাথে একসাথে কাজ করার কথা বলেছিলেন। তবে একই সাথে বলেছিলেন যে, ‘তারা আমাদের চাকরি নিয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়ে। আমরা বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান চুরির মাঝে বাস করছি।’ এ ছাড়া মনে হয় এক্ষেত্রে একটি মধ্যমপন্থা খুঁজে পেতে তিনি বলেছেন, ‘চীনে আমি অনেক বড় বড় লেনদেন করেছি। চীন বিস্ময়কর। আমি চীনের সাথে রাগান্বিত না। আমি বরং আমাদের লোকজনের ওপর রাগান্বিত যারা তাদেরকে এ সুযোগ করে দিয়েছে। চীন বেশ চমৎকার, কিন্তু তারা খুনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’ ট্রাম্প অবশ্য প্রায়ই বলেছিলেন, আমেরিকাকে অবশ্যই চীনের সাথে তার অর্থনৈতিক সম্পর্কে ‘জয়ী’ হতে হবে।
কিন্তু চার যুগেরও বেশি সময় ধরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণার প্রতিশ্রুতিকে কাটা ঘায়ে লবণের ছিটা হিসেবেই দেখে আসছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রেসিডেন্টকে আসতে যেতে দেখেছে, নির্বাচনী প্রচারণায় চীনের প্রতি হিংস্র-হুমকি দিয়ে আসছিল, তবে তারা এটাও দেখেছে যে তারাই দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই স্থিতিশীল একটি নীতিতে ফিরে গেছে।
তবে নির্বাচনী প্রচারণাকালে এশিয়ার ব্যাপারে আমেরিকার অবস্থানের ক্ষেত্রে তাঁর অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ট্রাম্প বেশ ঠান্ডা মেজাজেই ছিলেন বলে এটাকে চীনের জন্য একটা সম্ভাবনা বলে গণ্য করা হচ্ছে।
চীনা ভূ-নীতিনির্ধারকরা এখন প্রত্যাশা করবে যে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি খর্ব করতে তাদের আশা এবং নতুন করে এশিয়ার মানচিত্র আঁকার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্র সেক্ষেত্রে সহায়ক হবে।