নৌকায় খাবার নিয়ে সংঘর্ষে নিহত শতাধিক অভিবাসী!
ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা করুণ ও রোমহর্ষক সব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। উদ্ধার পাওয়া অভিবাসীরা জানায়, সমুদ্রে কয়েক দিন ভেসে থাকার পর খাবার নিয়ে সংঘর্ষে শতাধিক লোক মারা গেছে। অনেককে সাগরে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। বার্তাসংস্থা বিবিসির খবরে আজ এই তথ্য জানানো হয়।
ইন্দোনেশিয়ার বন্দরনগরী লাঙসায় অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখা ওই সব অভিবাসীর সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানায়, খাবার নিয়ে সংঘর্ষে একটি নৌকাতেই অন্তত ১০০ লোক মারা যায়। তারা বলছে, এদের কাউকে কাউকে ছুরি মেরে মারা হয়, কাউকে গলায় রশি পেঁচিয়ে মারা হয়। আবার কাউকে কাউকে নৌকা থেকে সাগরে ছুঁড়ে ফেলা হয়।
বেঁচে যাওয়া অভিবাসীরা জানিয়েছে, সমুদ্রে যখন খাবার শেষ হয়ে যাচ্ছিল, তখন বাকি খাবার নেওয়ার জন্য এ রকম তাদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কেউ কেউ একে অপরকে ছুরিকাঘাত করে। আবার অনেককে নৌযান থেকে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। মানব পাচারকারীরা অনেককে শাস্তি হিসেবে নৌকার সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। এ সময় খাবারের অভাবে অনেকে মারা যায়। তাদের লাশও সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়।
তবে সংবাদে বিবিসি জানিয়েছে, এই খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
বর্ণনাকারীদের একজন হলেন, বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিক। তিনি জানান, অন্তত ১০৪ জন লোক এভাবে মারা গেছে। সংঘর্ষে প্রাণে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন অভিবাসী বিবিসিকে জানিয়েছে, নৌকার অবস্থা ছিল ভয়াবহ।আহত তিনজন পৃথকভাবে জানিয়েছে, লোকজনকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত, একটু দুর্বলদের রশি দিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানো ও সাগরে ফেলে দেওয়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়াগামী সাত শতাধিক অভিবাসীকে সুমাত্রা দ্বীপের আচেহ উপকূল থেকে উদ্ধার করে ইন্দোনেশীয় জেলেরা। ইন্দোনেশিয়া সরকার এখন তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, এখনো হাজারো অভিবাসী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলসীমায় ভাসছে। কোনো দেশ তাদের নিজেদের জলসীমায় প্রবেশে অনুমিত দিচ্ছে না। তাদের কাছে কোনো খাবার ও পানি নেই। থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে ছুঁড়ে দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছে তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা শুধু নির্দিষ্ট একটা নৌকার চিত্র। অসমর্থিত সূত্রের হিসাব অনুযায়ী ভাসমান এই জেলখানায় আছে আট হাজারেরও বেশি মানুষ। গত সপ্তাহেই আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষকে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উপকূল থেকে নৌকায় করে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে সপ্তাহজুড়ে থাইল্যান্ডের উপকূল থেকে প্রায় সাত হাজার মানুষকে নৌকায় করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিপদে পড়া এসব মানুষকে সহযোগিতার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বান কি মুন। এ ব্যাপারে ভাসমান মানুষদের বাঁচাতে নিজেদের সীমান্ত ও বন্দর খোলা রাখার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান মহাসচিব।
কিন্তু বান কি মুনের এই আহ্বানে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো কতটুকু সাড়া দিচ্ছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে এরই মধ্যে। বঙ্গোপসাগর দিয়ে অভিবাসী অনুপ্রবেশ সংকটের সমাধান অনুসন্ধানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে চলতি মাসের শেষের দিকে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য এক আঞ্চলিক বৈঠকে যোগ দিতে অপারগতার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়া।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক উদ্ভূত মানবিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে ভারত মহাসাগরে নৌকা দিয়ে বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে পাড়ি জমানো রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিতে থাইল্যান্ডকে তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ঠেলে না দিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু আজ শনিবার পর্যন্ত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালু রেখেছে থাইল্যান্ড।
থাইল্যান্ডের প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা সংকট দেখেও না দেখার ভান করছে। এসব অভিযোগের ইতি টানতে থাইল্যান্ড সরকার আগামী ২৯ মে রাজধানী ব্যাংককে এক বৈঠকের আয়োজন করেছে। থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিবাসীদের এ উপচে পড়া ভিড়ের ‘মূল কারণ’ খুঁজে বের করাই হবে বৈঠকের মূল লক্ষ্য।