ইয়েমেনে অনাহারে মরছে মানুষ, বিশ্বের চোখ বন্ধ!

Looks like you've blocked notifications!
দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে খাদ্যাভাবে ইয়েমেনের শিশুরা এমন অপুষ্টির শিকার হয়ে পড়ছে। ছবি : রয়টার্স

অনাহারে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইয়েমেনের মানুষ। আর এ সম্পর্কে গোটা বিশ্ব চোখ বন্ধ করে রয়েছে বলে অভিযোগ করে মানবাধিকার ও দাতব্য সংগঠনগুলো।

রুশ সংবাদমাধ্যম রাশিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গত এপ্রিল মাস থেকে ইয়েমেনের মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফাম। দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্রতম দেশে পরিণত হয়েছে বলেও দাবি তাদের।

২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে ইয়েমেনের নির্বাসিত প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বো মনসুর হাদীর সমর্থনে দেশটির ওপর বোমা বর্ষণ শুরু করে সৌদি আরব। আর এর পেছনে যুক্তি ছিল, ইয়েমেনের রাজধানীর সানার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হুতি বিদ্রোহীরা সাবেক রাষ্ট্রপতি আলী আবদুল্লাহ সালেহর প্রতি অনুগত এবং ইরান তাঁদের সমর্থন দিচ্ছে।

এই যুদ্ধের কারণে ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে। নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১১ হাজার। অক্সফাম বলছে, গত দুই বছরে শিশু অপুষ্টির হার ২০০ শতাংশ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাত হাজার মানুষের কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে।

দেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ অপুষ্টি ও অনাহারে ভুগছে। এদের মধ্যে ৮২ শতাংশেরই দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।

অক্সফামের প্রধান নির্বাহী মার্ক গোল্ডরিং বলেন, ইয়েমেন ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে সেখানে অতিরিক্ত খাদ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে যখন তা কিছুটা শিথিল হলো তখন বন্দরের ক্রেনগুলো বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হলো। এরপর ধ্বংস করা হলো গুদাম। একে একে সড়ক এবং সেতুও ধ্বংস করা হলো। আর এসব ধ্বংস করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে, কোনো দুর্ঘটনার কারণে নয়।

ইয়েমেনের অর্থনীতি, এর প্রতিষ্ঠান, জনগণের দেখাশোনা করার ক্ষমতা সবই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বলেও মন্তব্য করেন এই অক্সফাম কর্মকর্তা।

সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটকে ইয়েমেনের ওপর থেকে খাদ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে অনুরোধ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য দুই দেশই অস্ত্র এবং অন্যান্য কৌশলগত সহায়তা করছে কিন্তু সাধারণ মানুষের মৃত্যু বা যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে তারা মাথা ঘামাচ্ছে না।

এ বিষয়ে মার্ক গোল্ডরিং বলেন, ‘নৃশংস এই যুদ্ধের অন্যতম সমর্থক ব্রিটেনের উচিত ইয়েমেনের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা এবং সৌদি আরব জোটকে সামরিক সহায়তা না দেওয়া। যাতে করে ইয়েমেনে শান্তি ফিরে আসতে পারে।’

ইয়েমেনের জনগণের দুর্দশার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘও। বিরাট এই মানবিক বিপর্যয়েও বিশ্ব নেতৃত্ব চোখ বন্ধ করে রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। জাতিসংঘের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা ম্যাক গোল্ডরিক বলেন, ‘ইয়েমেনে কী ঘটছে সে বিষয়ে যেন অন্ধ হয়ে বসে আছে গোটা বিশ্ব। দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি মানবিকতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। পরিবারগুলো কোনোভাবেই সদস্যদের জন্য খাবারের সংস্থান করতে পারছে না।’

এদিকে সৌদি আরব সরকারের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র যুক্তিকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অলিভার স্প্রাগ। ব্রিটেনের দ্রুত অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। অলিভার স্প্রাগ বলেন, সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাজ্যের বিক্রি করা এসব অস্ত্র ইয়েমেনের মানবাধিকারের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে ইয়েমেনের শহর সানায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোটের চালানো বিমান হামলায় ১৩১ জন নিহত হয়। এর আগে এক শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে হামলা চালানো হলে মারা যায় ১৪০ জন।