সালাহ উদ্দিন বাংলাদেশে নিরাপদ নন
আমার স্বামী বাংলাদেশে নিরাপদ নন। আমি তাঁকে সেখানে নিয়ে যেতে পারব না।
ভারতের একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এভাবেই বলেছেন ঢাকা থেকে রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস পর শিলংয়ে ‘আবির্ভূত’ হওয়া বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। সাথে তিনি যোগ করেছেন, ‘আমি তাঁকে দ্রুত সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে চাই। যেখানে তিনি বহু বছর ধরেই হৃদরোগ এবং কিডনি সমস্যার চিকিৎসা নিতেন।’
হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আমি জানি না এত দিন তিনি কোথায় ছিলেন। আমি জানি না তিনি কীভাবে শিলংয়ে পৌঁছালেন। তবে এটা ভেবে আমি খুব খুশি যে, তিনি এখানে ভালো আছেন এবং তাঁর অনেক ভালো যত্ন নেওয়া হচ্ছে।’
শিলংয়ের পুলিশ বলছে, ৫৪ বছর বয়সী সালাহ উদ্দিনকে গত ১২ মে গ্রেপ্তার করে তারা। গলফ লিংক এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় স্থানীয় বাসিন্দারা খবর দিলে পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে সালাহ উদ্দিন বারবারই নিজের পরিচয় দিচ্ছিলেন তবে কীভাবে মেঘালয়ে পৌঁছেছেন সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারছিলেন না তিনি।
রোববার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে আলাপকালে সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ দাবি করেন, ১০ মার্চ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না।
স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে ১৮ মে শিলং পৌঁছেন হাসিনা আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী খুবই অসুস্থ। তাঁর হৃদযন্ত্রে তিনটি রিং পরানো আছে, তা ছাড়া তাঁর বাম কিডনি ভালোভাবে কাজ করছে না। আমি বলছি না যে, এখানে তাঁর ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না। কিন্তু সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল তাঁর রোগের ধরন সম্পর্কে জানে এবং সেখানে তিনি গত ২০ বছর ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং এখন যদি আমি তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে যাই, আমি জানি না কী হবে।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদের ‘অন্তর্ধান’ সম্পর্কে হাসিনা আহমেদ বলেন, ১১ মার্চ আমি জানতে পারি যে, আগের দিন বিকেলে ঢাকার উত্তরায় এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর সেখান থেকে কিছু লোক তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের সময় সেখানে একটি সরকারি বাহিনীর গাড়িসহ বেশকিছু গাড়ি ছিল। আমি জানি না কারা এবং কেন তাঁকে অপহরণ করেছিল।’
‘আমি যেখানে বাস করি সেখানকার অর্থাৎ গুলশান থানায় প্রথমে যাই। কিন্তু পুলিশ সাধারণ ডায়েরি করতেও অপারগতা জানায়। তারা আমাকে উত্তরা থানায় যেতে বলে। উত্তরা থানায় গেলে তারা জানায়, কোনো সাক্ষী হাজির করতে না পারলে তারা আমার এফআইআর নিতে পারবে না। এর পরের দিন অর্থাৎ ১২ মার্চ, আমি উচ্চ আদালতে যাই। আদালত আমার স্বামীকে খুঁজে দিতে সরকারকে নির্দেশ দেন। এমনকি প্রতি মাসের প্রথম তারিখে সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে পাওয়া সম্পর্কিত প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট,’ যোগ করেন সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী।
হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুইবার দেখা করার জন্য আবেদন পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় বের করতে পারেননি। আমি পুলিশের মহাপরিদর্শকের দরজাতেও কড়া নেড়েছি, কিন্তু সেখান থেকেও কোনো সাড়া পাইনি।’
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলেছে, ‘ঢাকার গণমাধ্যমগুলো স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সালাহ উদ্দিনকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হবে এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের হরতালে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিচার করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর খালেদা জিয়ার দল বিএনপিতে যোগ দেন সালাহ উদ্দিন। ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে কক্সবাজার আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। খালেদা জিয়া সরকারে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।’
শিলংয়ে আসা বিএনপির এক নেতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘২০০৭ সালে অন্য বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তাঁকেও দুই বছরের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়। এরমধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁর আসনে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তাঁর স্ত্রী।’
বিএনপির এই নেতা আরো জানান, ‘গত কয়েক বছরে সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্দে অন্তত ২৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশজুড়ে হরতালের ডাক দেওয়ার পর পরই ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তাঁকে সবশেষ গ্রেপ্তার করা হয়।’
গত ১০ মার্চ উত্তরা থেকে নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে খোঁজ মেলে সালাহ উদ্দিনের। ১২ মে সালাহ উদ্দিনকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগের দিন তাঁকে উদ্ধার করে একটি মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। এ দিনই বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করায় ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখায় মেঘালয় পুলিশ।
সালাহ উদ্দিন এখন শিলংয়ের নেগ্রিমস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ২৪ ঘণ্টা মেঘালয়ের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের কড়া প্রহরার মধ্যে আছেন তিনি। গত শুক্রবার শিলংয়ের একটি আদালতে তাঁর পক্ষে জামিন আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী। এ বিষয়ে ২৯ মে পুলিশকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি নেগ্রিমস হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট অনিল ফুকান।