কিশোরকে পুলিশের গুলি : ফ্রান্সে সহিংস বিক্ষোভ অব্যাহত 

Looks like you've blocked notifications!
ফ্রান্সের প্যারিসের শহরতলি নান্টেরেতে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহতের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীরা মিছিল শেষে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। ছবি : এএফপি

ট্র্যাফিক আইন ভাঙায় ফ্রান্সে আফ্রিকান এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে দেশটির পুলিশের বিরুদ্ধে। ১৭ বছরের উত্তর আফ্রিকার কিশোরকে প্যারিসের কাছেই হত্যা করা হয়েছে। একটি ট্র্যাফিক সিগন্যালে খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করা হয়। ট্র্যাফিক আইন না মানার কারণে তাকে গুলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রান্সজুড়ে তীব্র অসন্তোষ চলছে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এর প্রতিবাদ করে বলেন, ‘এই ঘটনার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না।’ ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্যারিসের শহরতলিতে ওই কিশোর নিহত হওয়ার অঞ্চলে বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) দিনভর প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সাদা জামা পরে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। গাড়ির হর্ন বাজিয়ে তারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। ঘটনাস্থলে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শুধু সেখানেই নয়, গোটা প্যারিসজুড়েই বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই দেশে আমরা আর নিরাপদ নই। যেকোনো সময় যে কেউ খুন হয়ে যেতে পারে। ফ্রান্সের স্পিরিট (চেতনা) ছিল সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। সেই ফ্রান্সের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। দেশটা এক পুলিশ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’

ঘটনার পর থেকে প্যারিসে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সহিংসতার জন্য ৪২১ জন বিক্ষোভকারীকে পুলিশ আটক করেছে। সংঘর্ষে ১৭০ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে প্রশাসন। একাধিক স্কুল, বাস ও পুলিশের ভ্যানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ভাঙার চেষ্টা চালানো হয়েছে থানা ও সরকারি ভবন।

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, পুলিশ বাহিনীর ওপর তার সম্পূর্ণ ভরসা আছে। শৃঙ্খলাবদ্ধ এই বাহিনী যথেষ্ট মানবিকতার সঙ্গে বিক্ষোভ দমন করছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বললেও একটি বিষয় স্পষ্ট। গত কয়েক বছরে ফ্রান্সে পুলিশের নির্যাতন বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের দাবি, পুলিশের মধ্যে বর্ণবাদ বেড়েছে। তার বলি হচ্ছে বহু মানুষ। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে তারা বিবৃতি দিয়েছে। প্রশাসনকে দ্রুত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

পুলিশ মুখপাত্র সোনিয়া অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে রাস্তায় গুলি চালানোর ঘটনা ছিল ১৫৭টি, ২০২২ সালে তা কমে ১৩৮ এ দাঁড়িয়েছে। এর থেকেই পরিষ্কার, এ ধরনের ঘটনা ক্রমশ কমছে।’

পুলিশ যা-ই বলুক, সাম্প্রতিক ঘটনা ফ্রান্সে যে প্রবল আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে, তা দ্রুত না থামার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।