নাভালনির মৃত্যু : রাশিয়াকে কঠোর নিষেধাজ্ঞার ভাবনা ইইউর

Looks like you've blocked notifications!
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে সোমবার একটি অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির ছবির চারপাশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। ছবি : এএফপি

রাশিয়ায় নিহত পুতিনবিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুর জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তাই আরও কঠিন নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ইইউর পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল বলেছেন, ‘পুতিনের শাসনামলে রাশিয়ার জেলে নাভালনিকে তিলে তিলে হত্যা করা হলো।’

ইইউর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নাভালনির অপ্রত্যাশিত মৃত্যু রাশিয়ার পরিকল্পিত দমননীতির আরেকটি উদাহরণ। রাশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কর্তৃপক্ষকে যাতে এর মূল্য দিতে হয়, সেজন্য ইইউ সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে। কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।’

কবে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে, তা জানাননি বরেল। তবে এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সম্পত্তি ফ্রিজ করে দেওয়া এবং নাভালনির মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের ইইউতে প্রবেশ করতে না দেওয়ার মতো ব্যবস্থা থাকবে।

বরেল বলেন, ‘এই ঘটনার জন্য কারা দায়ী, আমরা তাদের চিহ্নিত করব। এই কাজটা সহজ নয়।’

গতকাল সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ব্রাসেলসে ইইউর মন্ত্রীরা অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইউলিয়া বলেন, ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনই জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় নাভালনির মৃত্যুর জন্য দায়ী।’

ইউরোপীয় পলিসি সেন্টারের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ মারিয়া বলেন, ‘ব্যক্তিগত স্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে খুব একটা লাভ হবে না। এটা প্রতিরোধকের কাজও করবে না।’ 

মারিয়া আরও বলেন, ‘রাশিয়ার বিরোধী রাজনীতিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে ইইউকে। যে রাজনীতিকদের জীবনের ঝুঁকি আছে, তারা যাতে সপরিবারে ইইউর দেশে এসে থাকতে পারেন এবং স্বাধীনভাবে তাদের কাজ চালাতে পারেন, সেই অধিকার তাদের দিতে হবে। তারা দেশ ছাড়তে চাইলে ইইউকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।’

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক বলেন, ‘অধিকারের চেতনাকে চিরকাল চুপ করিয়ে রাখা যায় না। নাভালনি ছিলেন সেই বিরোধীনেতা, যিনি সাহসের সঙ্গে অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। এ ছাড়া রাশিয়ার জেলে এমন অনেক বন্দি আছেন, যারা রাশিয়ায় অধিকারের জন্য লড়াই করতে গিয়ে জেলে বর্বরোচিত অত্যাচার সহ্য করছেন।’

ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইইউ। সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও কয়লা কেনা, যাতায়াত এবং প্রায় দুই হাজার ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের সম্পত্তি ফ্রিজ করে দেওয়া। ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকী আসছে। ইইউর কূটনীতিকরা তাই আরও একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা চালু করতে চলেছেন। শতাধিক ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে তা জারি করা হবে।

সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে হাঙ্গেরিও সবুজ সংকেত দিয়েছে। হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার বলেন, তারা মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চান না। তবে এই পরিকল্পনার বিরোধিতাও তারা করবেন না। ফলে এই সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞার খসড়া অনুমোদিত হতে পারে। নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর চাপ পড়ে। তা সত্ত্বেও রাশিয়া দাবি করে, নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাদের বিপাকে ফেলা যাবে না। 

অন্যদিকে ইউরোপীয় পলিসি সেন্টারের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ মারিয়া বলেন, নতুন যে নিষেধাজ্ঞা জারির কথা চলছে, তাতে রাশিয়াকে সামরিক দিক থেকে চাপে ফেলা যাবে না।