আরও কূটনৈতিক নিয়ন্ত্রণ পেতে জার্মানিকে চাপ দিচ্ছে তালেবান
২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ২৮ আফগানকে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে জার্মানি৷ এদিকে, জার্মানিতে থাকা কাবুলের কূটনৈতিক মিশনের উপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তালেবান৷
বার্লিন দৃশ্যত বিষয়টি গ্রহণ করেছে৷ জুলাইয়ের শেষদিকে তালেবান জানায়, তারা ইউরোপের মাত্র পাঁচটি আফগান কূটনৈতিক মিশনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে৷ এগুলো হচ্ছে, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, বুলগেরিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রে থাকা দূতাবাস এবং জার্মানির মিউনিখে থাকা কনস্যুলেট৷
এই কূটনৈতিক মিশনগুলো আফগানিস্তানের নির্দেশ অনুসরণ করে এবং বিদেশে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে৷ তাদের কাজের প্রতি আমাদের আস্থা আছে এবং এই কার্যক্রমগুলো স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়, ডিডাব্লিউকে বলেন তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ৷ ‘তারা দায়বদ্ধ ও আমাদের আদেশ পালন করে’ যোগ করেন তিনি৷
মিউনিখের কনস্যুলেট ছাড়াও জার্মানির বার্লিনে আফগান দূতাবাসও বন শহরে আরেকটি কনস্যুলেট আছে৷ তালেবানের ঘোষণার কারণে এখন দূতাবাস ও বনের কনস্যুলেট থেকে ইস্যু করা ভিসা ও পাসপোর্ট আর আফগানিস্তানে স্বীকৃত হবে না৷
তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ইউরোপের বেশিরভাগ আফগান দূতাবাস তালেবানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে৷ তারা আফগানিস্তান থেকে অর্থ সহায়তা নেয় না৷ তবে কনস্যুলার সেবা দিয়ে যাচ্ছে৷ বিনিময়ে পাওয়া অর্থ দিয়ে মিশনগুলো চলছে৷
জার্মানিতে শুধু মিউনিখ কনস্যুলেটকে তালেবান স্বীকৃতি দেওয়ায় জার্মানিতে বাস করা প্রায় চার লাখ ২০ হাজার আফগানকে কনস্যুলেট সেবা নিতে সেখানে যোগাযোগ করতে হচ্ছে৷
কাবুলের ‘ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’কে উদ্দেশ্য করে ‘আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি' পাঠানোর মাধ্যমে মিউনিখে কনস্যুলার সেবা দেওয়ার বিষয়টি গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে বার্লিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
হালে-ভিটেনব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ভিনফ্রেড ক্লুট ডিডাব্লিউকে বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের কারণে তালেবানের সিদ্ধান্ত নিয়ে বার্লিনের কিছু করার নেই৷ বরং আফগানদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে যে ভিসা ও পাসপোর্টের প্রয়োজন সেটা পাওয়ার জন্য জার্মানিতে অন্তত একটি কনস্যুলার সেবা দেওয়ার স্থান থাকা প্রয়োজন ছিল৷ মিউনিখে সেটা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি৷
বার্লিন শুধু একটি বিষয়ে কাবুলের বিরোধিতা করেছে৷ সেটি হচ্ছে, মিউনিখ কনস্যুলেটে জার্মানি ছাড়াও ইউরোপের অন্যান্য দেশের আফগানদের সেবা গ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল তালেবান৷ তবে বার্লিন বলেছে, এটি ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থি হবে৷
এছাড়া আফগানিস্তানের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের সঙ্গে ‘টেকনিক্যাল ডিসকাশন’ চলার কথাও জানিয়েছে বার্লিন৷ এ সংক্রান্ত একটি কাগজ ডিডাব্লিউর কাছে আছে৷
তালেবানের সঙ্গে এমন আলোচনা চলার কথা শুনে প্রবাসী আফগানরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ নারী অধিকারকর্মী ও আফগানিস্তানের শরণার্থী বিষয়ক সাবেক উপমন্ত্রী আলেমা আলেমা বলছেন, আফগান নাগরিকদের ফেরানোর বিনিময়ে তালেবান জার্মানিতে একটি দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করতে চাইতে পারে৷ সেখানে তালেবান নিজেদের মানুষজন পাঠাতে পারে৷
জার্মানি যখন আরও বেশিসংখ্যক অভিযুক্ত আফগানদের দেশে ফেরত পাঠাতে চাইছে তখন এই বিষয়টি বার্লিনের ওপর আরও চাপ তৈরি করতে পারে৷ তবে বার্লিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে, সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত হলো আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখা৷ আফগানিস্তান এখনও সেই পূর্বশর্তগুলো পূরণ করেনি৷