দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির কয়েক ঘণ্টা পর প্রত্যাহার
পার্লামেন্ট সদস্যদের বিরোধিতার মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল মঙ্গলবার রাতে আকস্মিকভাবে জারির কয়েক ঘণ্টা পর আজ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ভোরে সামরিক আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন।
সিউল থেকে এএফপি জানায়, এ বিষয়ে পার্লামেন্টে ভোটের পর ইউন সুক ইওল বলেন, সামরিক আইনের অবসান ঘটাতে পার্লামেন্টের অবস্থান তিনি মেনে নেবেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এ আইন প্রত্যাহার করা হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার আইন প্রণেতারা ইউন সুক ইওলের অপ্রত্যাশিত ঘোষণার বিরোধিতা করে ভোট দেওয়ার পরে ইউন পিছু হটলেন। তার সামরিক আইন জারির ঘোষণা সারা বিশ্বে দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও হতবাক করেছিল।
এর আগে জাতীয় পরিষদ সিল করে দেওয়া হয় এবং সৈন্যরা অল্প সময়ের জন্য ভবনে প্রবেশ করে। এ সময় শত শত বিক্ষোভকারী বাইরে জড়ো হয় এবং তারা নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি হয়।
ইউন স্থানীয় সময় আজ ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, 'কিছুক্ষণ আগে জাতীয় পরিষদ থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়, এবং আমরা সামরিক আইন পরিচালনার জন্য মোতায়েন করা সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করেছি।' তিনি বলেন, 'আমরা জাতীয় পরিষদের অনুরোধ মেনে নেব এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকের মাধ্যমে সামরিক আইন তুলে নেব।'
ইয়োনহাপ বার্তা সংস্থা জানায়, ইউনের মন্ত্রিসভা আদেশ প্রত্যাহারের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
প্রেসিডেন্টের এ ইউ-টার্ন পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আনন্দের উদ্রেক করে। তারা ইউনের সামরিক আইনের আদেশ অমান্য করে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে রাতভর জেগেছিল।
বিক্ষোভকারীরা ব্যানার ও দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা নেড়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বাইরে ইউন সুক ইওলকে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দেয়।
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল বলেন, ‘পার্লামেন্টের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি সামরিক আইন প্রত্যাহারের কথা সামরিক বাহিনীকে জানিয়েছি।’
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘পার্লামেন্টের প্রস্তাব গ্রহণ ও সামরিক আইন প্রত্যাহার করার জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠক করছে। বৈঠকের পর সামরিক আইন তুলে নেওয়া হবে।’
এর আগে মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে ৪০ বছরপর মধ্যে প্রথমবারের মতো জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। তিনি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে উদার দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষা করতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করতে... আমি জরুরি সামরিক আইন ঘোষণা করছি।’
ইউন সুক ইওল আরও বলেন, ‘জনগণের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা না করে বিরোধী দল কেবল অভিশংসন, বিশেষ তদন্ত এবং তাদের নেতাকে বিচার থেকে বাঁচাতে সরকারকে অচল করে দিয়েছে।’
ইউনের পিপল পাওয়ার পার্টি ও প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে আগামী বছরের বাজেট বিল নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ আকস্মিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বিরোধী দলীয় এমপিরা গত সপ্তাহে সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে একটি বেশ ছোট আকারের বাজেট পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।
ইউন বলেন, ‘আমাদের জাতীয় পরিষদ অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য ও আইনি স্বৈরাচারের আস্তানায় পরিণত হয়েছে, যা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে অচল এবং আমাদের উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে চায়।’
ইউন সুক-ইওল অভিযোগ করেন, বিরোধী আইন প্রণেতারা মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জননিরাপত্তা বজায় রাখার মতো দেশের মূল কাজগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বাজেট কাট-ছাঁট করে দেশকে মাদক এবং জননিরাপত্তা বিশৃঙ্খলার স্বর্গরাজ্য পরিণত করেছেন।
ইউন ৩০০-সদস্যের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরোধী দলকে সরকার উৎখাত করতে চাওয়া ‘রাষ্ট্র বিরোধী শক্তি’ অভিহিত করে তার সিদ্ধান্ত ‘অনিবার্য’ ছিল বলে দাবি করেন। তিনি যত দ্রুত সম্ভব রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির হাত থেকে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও অঙ্গীকার করেন।
সামরিক আইন জারির পর সিউলে পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদ ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে কিছু সময়ের জন্য পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন সেনাসদস্যরা। ভবনের ওপরে হেলিকপ্টার নামতেও দেখা যায়।
এই পরিস্থিতির মধ্যেও আজ রাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে এড়িয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে সক্ষম হন ১৯০ জন আইনপ্রণেতা। তারা সামরিক আইনের বিরুদ্ধে ভোট দেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য চাইলে সামরিক আইন অবশ্যই তুলে নিতে হবে।