শতবর্ষে পটুয়া কামরুল হাসান
বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ কামরুল হাসান। ১৯২১ সালের ২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বর্ধমান জেলার কালনা থানার নারেঙ্গা গ্রামে এই মৃত্যুঞ্জয়ী শিল্পীর জন্ম হয়েছিল। বেঁচে থাকলে কামরুল হাসান আজ শতবর্ষী হতেন।
কামরুল হাসানকে সবাই শিল্পী বললেও তিনি নিজে পটুয়া নামে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে জেনারেল ইয়াহিয়ার মুখের ছবি দিয়ে আঁকা ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ পোস্টারটি খুব বিখ্যাত।
কামরুল হাসান কলকাতা মডেল এমই স্কুল, কলকাতা মাদরাসা এবং পরবর্তী সময়ে কলকাতা ইনস্টিটিউট অব আর্টসে অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি ১৯৪৭ সালে ফাইন আর্টসে পাস করেন। দেশভাগের পর কামরুল হাসান সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন।
রাজনৈতিকভাবে প্রগতিপন্থি কামরুল হাসান অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, যা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও রেডিওর কলা বিভাগের পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় পতাকার নকশার পূর্ণাঙ্গতা দিয়েছেন। জাতীয় প্রতীকের ডিজাইন, দেশের সংবিধানের প্রচ্ছদ ও অলংকরণও তাঁর হাতে সৃষ্টি। বাংলা একাডেমির ফেলো, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ বিভিন্ন পদক পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছিল তাঁকে।
১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় কবিতা পরিষদের উৎসবের সমাপনী দিনে সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনি ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ শিরোনামের স্বৈরাচারবিরোধী রেখাচিত্র আঁকার পর আকস্মিকভাবে পরলোকগত হন মাত্র ৬৭ বছর বয়সে।