কবিতা
গাছটি—মানুষটি
আমাদের মহল্লার ঠিক মধ্যিখানে একটা গাছ ছিল
নামহীন-গোত্রহীন সেই গাছটি দেখতে অনেকটা অশ্বত্থের মতো হলেও
পাতাগুলো ছিল তার নারকেল পাতার মতো। অথচ ফল দিতো আম,
মগডালে জাম কিংবা লিচু; গায়ে গায়ে ঝুলত কাঁঠাল কিংবা তরমুজ;
পেয়ারা, নাশপাতি, কামরাঙ্গা, বাতাবিলেবুও দেখা মিলত কখনো-সখনো।
অদ্ভুত চোখে দেখতাম সেই আশ্চর্য বৃক্ষ!
কেউ সেটিকে ডাকত ছায়া, কেউ মায়া, কেউ আশ্রয়, কেউ-বা কোনো নামেই নয়।
ঠিক কবে কখন এর জন্ম, তার ঠিকুজি বলতে ব্যর্থ পাড়ার বুড়ো ও বড়রা
বরং নানারকম কিংবদন্তি ছিল সেটিকে ঘিরে। শোনাত গালগল্প—ভয় ও রূপকথার।
বড় বড় পদবিধারী প্রকৃতিবিদেরা এসে সংগ্রহ করেন গাছটির নমুনা
পত্রিকার পাতায় প্রকাশ পায় রঙিন ছবি, টিভিতে বিশেষ খবর।
দলে দলে মানুষ ভিড় করে অপার কৌতূহলে।
ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে সবাই এসে হাজির হয় গাছের তলে
মানত করে মনের আশায়, কেউ-বা পূজা-আর্চা, জিকির-কীর্তন।
শান্ত পাড়াটি কেমন করে যেন হয়ে ওঠে তীর্থভূমি।
চারদিকে রবরব। দোকানপাট। ফকির-সাধুর আনাগোনা।
একদিন হঠাৎ ঘটল আরেক অদ্ভুত ঘটনা।
কোনো কারণ ছাড়াই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল বৃক্ষের কাণ্ড।
আহাজারি, কান্নাকাটি, বেদনা। একদিন-দুই দিন-তিন দিন
তারপর একদিন মাটি ও হাওয়া সবই ফাঁকা হয়ে পড়ে। ফিরে আসে শূন্যতা।
আশ্রয় হারানোর শোক কত দিনই-বা থাকে?
তবে একজনকে দেখতাম সেই শূন্যতাকে আঁকড়ে থাকতে
নামহীন-গোত্রহীন এ মানুষটি কবে কখন ওই জায়গায় বসত গড়ে কেউ জানে না
কেবল দেখি, ওর ফালা করা শরীরটি আধখানা পুরুষ আর আধখানা নারীর।
ট্যাগ: