মেলা
চট্টগ্রামের মহামুনির মেলা

পাহাড় ঘেরা সবুজ প্রকৃতির এক অপরূপ গ্রাম মহামুনি। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় অবস্থিত এই গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বাংলাদেশরে প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী মহামুনি মেলা। বর্ষ বিদায় এবং বর্ষ বরণ করে নিতে ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শন মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এ মেলা।
প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এ মেলা প্রতি বছর চৈত্র্য সংক্রান্তির শেষ দিন থেকে শুরু করে সপ্তাহব্যাপী চলতে থাকে। ঐতিহাসিক এ মেলা চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক মিলনমেলা। সেই সাথে মহামুনি মেলার জনপ্রিয়তার হাত ধরে কলকাতার পশ্চিমবঙ্গ থেকেও দর্শনার্থীদের ভিড় জমে থাকে। এই মেলার প্রধান আর্কষণ হলো পানি খেলা। পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী মেয়েরা লাল, নীল, সাদা পানি একে অন্যের দিকে ছুড়ে মারে। বর্ষবরণ উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে আলেচনা সভা, সংগীতানুষ্ঠান, নাটক, নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চৈত্র্য সংক্রান্তির দিন পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পুণ্যার্থীরা সারাদিন অবস্থান শেষে সন্ধ্যায় বুদ্ধের পুণ্য লাভের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে। রাতভর চলতে থাকে স্বনামধন্য শিল্পীদের নানা অনুষ্ঠান। মহামুনি মেলাকে ঘিরে মন্দির চত্বরে মৃৎ শিল্প, কারুশিল্প, হস্তশিল্প তৈরি নানা উপকরণের সমারোহ ঘটে। এ ছাড়া হরেক রকম মিষ্টি, বাহারি প্রসাধনী, স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য, ফলমূলসহ শতাধিক দোকান বসে।
প্রচলিত আছে, উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নে কদলপুর গ্রামে ‘চাইঙ্গা ঠাকুর’ নামের এক বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু এই বিহারে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে মহামানব গৌতম বুদ্ধের মূর্তি স্থাপন করেন বলে এর নামকরণ করা হয় মহামুনি মন্দির। মন্দিরের নাম অনুসারে কদলপুর গ্রামের নাম বদলে মহামুনি হিসেবে পরিচিতি পায়। এই মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে ১৮৪৩ সালে মং সার্কেল রাজা চৈত্র্যের শেষ তারিখে মেলার আয়োজন করেন। পরবর্তী সময়ে মেলাটি মহামুনি মেলা নামে পরিচিত লাভ করে।