একটা লাইন লেখার জন্য অপেক্ষা করি : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
নিজেকে বিজ্ঞানভিত্তিক লেখক মনে করেন না শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সেটা অকপটে স্বীকার করেন তিনি গতকাল শনিবার ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে। কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সঙ্গে উৎসবের শেষ অধিবেশনে খোলামেলা কথা বলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় এই লেখক।
গল্পের শেষ কী হবে, সেটা ঠিক করে লিখতে বসেন না শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি একটা লাইন লেখার জন্য অপেক্ষা করি। লাইনটা ঠিকমতো লিখতে পারলেই গল্পটা শুরু করি। এরপর চরিত্রগুলো আমি দেখতে পাই। তাঁদের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়। তবে আমি নিজেকে বিজ্ঞানসম্মত লেখক একদম ভাবি না।’
ভাষার ব্যবহার নিয়েও কথা বলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি ভাষা নিয়ে ভাবি। ভাষা এমন একটা বাহন, যা অন্ধ হয়েও ব্যবহার করা যায়। গল্প সাধারণ হোক, কিন্তু ভাষার ব্যবহার আমার মনের মতো হতে হবে।’
পুরোনো লেখার স্মৃতি স্মরণ করে শীর্ষেন্দু বলেন, ‘একটা গল্পের দৃশ্য আমি পঞ্চাশবার লিখেছি। আমি আমার জন্য লিখি। যতক্ষণ না আমি তৃপ্তি পাই, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি লিখতে পারি।’
সন্ধ্যার সেই আড্ডায় ইমদাদুল হক মিলন শীর্ষেন্দুর শিশুদের বই নিয়েও আলাপ করেন। ‘মনোজদের অদ্ভূত বাড়ি’ বইটি নিয়ে মজার আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন এই দুই লেখক। শীর্ষেন্দু বলেন, “শিশুদের মনোজগত অনেক সরল। যা মনে হয় তারা তাই বিশ্বাস করে। আমি ভূতকে মজার চরিত্র করার চেষ্টা করেছিলাম ‘মনোজদের অদ্ভূত বাড়ি’ বইতে। এই বইটা পড়ে আমাকে অনেকে বলেছে, আমার ভূতের ভয় ছিল। আপনার গল্পের বইটা পড়ে ভূতের ভয় কেটে গেছে।”
কথায় কথায় শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ উপন্যাসের শত বছর পূর্তি উদযাপন নিয়েও কথা বলেন শীর্ষেন্দু। মজা করে তিনি বলেন, ‘উপন্যাসের যুক্তির অভাব আছে। দেবদাসের সঙ্গে চন্দ্রমুখীর প্রণয় অযৌক্তিক। তবে ১০০ বছর ধরে পাঠক এই কাঁচা উপন্যাস পড়ছে। এটা অনেক বড় ঘটনা।’
বাংলার অনেক প্রচালিত শব্দ শীর্ষেন্দুর লেখায় খুঁজে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ইমদাদুল হক মিলন শীর্ষেন্দুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলার নানা জায়গা থেকে ভাষা কুড়িয়েছি। লাতন শব্দটি আমি আমার লেখা একটা গল্পে ব্যবহার করেছি। এর অর্থ ক্লান্ত হয়ে পড়া। এই অপ্রচালিত শব্দটা আমি ঠাকুরের কাছ থেকে পেয়েছি।’
শীর্ষেন্দুর কথা উপস্থিত দর্শক দারুণভাবে উপভোগ করেছেন। পরিপূর্ণ ছিল পুরো হল। মানুষ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে-বসে শুনেছেন প্রিয় সাহ্যিতিকের জীবনের নানা গল্প। দর্শকও শীর্ষেন্দুকে করেছেন নানা প্রশ্ন।
এবার ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিল্পী ও সাহিত্যিকের পাশাপাশি এসেছিলেন ভারতীয় অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা ও পরিচালক নন্দিতা দাস। এ ছাড়া এসেছিলেন অস্কার বিজয়ী ব্রিটিশ অভিনেত্রী টিলডা সুইনটন।