১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’
১৪ দেশের ২৫০ জনের বেশি অতিথির পদভারে মুখরিত হতে যাচ্ছে পঞ্চম আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারের সাহিত্য অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়েই শুরু হচ্ছে এই উৎসব। রবিবার বাংলা একাডেমির সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজক কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানায়।
পঞ্চম আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্ সিদ্দিকী বলেন, এর আগে ভিন্ন নামে হলেও এবারের আয়োজন হচ্ছে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ ব্যানারে। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং বাংলা একাডেমির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এই সাহিত্য সম্মেলনে পাশে থাকবার জন্য। সাদাফ বলেন, ২০১১ সালে হে ফেস্টিভ্যাল ঢাকা নামে শুরু হয়। বাংলা সাহিত্য ও বাংলাকে বিশ্ব দরবারের পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আমরা এই যাত্রা শুরু করেছি। তিনি জানান, এবারের উৎসবে স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক নয়নতারা শেহগাল, ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং টেলিভিশন উপস্থাপক জন স্নো, কিউবান শীর্ষ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক ইয়োস, কেনিয়ার শিশু সাহিত্যিক ও বক্তা মুথোনি গারল্যান্ড, পাকিস্তানি মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর, ফিলিস্তিনি কবি ঘাসান জাকতান, ঔপন্যাসিক অমিত চৌধুরী এবং ভারতীয় কবি অরবিন্দ কৃষ্ণ মেহরোত্রা।
সাদাফ আরো জানান, এই উৎসবে বাংলার আদি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে মঞ্চস্থ হবে মনসা মঙ্গলের বিশেষ অংশ বেহুলার লাচারি। এই অংশটি মঞ্চায়নের জন্য টাঙ্গাইল থেকে আসছে যাত্রা দল। এখানে প্রকাশিত হবে কায়জার হকের ইংরেজি ভাষায় অনূদিত মনসা মঙ্গল। এ ছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী হ্যারল্ড ভারমোসকে সম্মাননা দেওয়ার কথাও তিনি জানান। তিনি বলেন, হ্যারল্ড চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও প্রথম জীবনে সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক করেছেন।
উৎসবের পরিচালক ও লেখক কাজী আনিস আহমেদ বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এই উৎসবের সঙ্গে থাকার জন্য। তিনি বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই আমরা বিশ্ব সাহিত্যের নানা বিষয়ে পড়ে বড় হয়েছি। প্রতিনিয়ত বিশ্ব থেকে আমরা নিচ্ছি অবারিতভাবে কিন্তু দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাসাহিত্যেরও আন্তর্জাতিক সাহিত্য অঙ্গনকে কিছু দেওয়ার আছে। সেই অভিপ্রায় থেকেই বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে কাজ করছে ঢাকা লিট ফেস্ট।‘ তিনি আরো বলেন, বাংলায় যারা লেখেন তাঁদের বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা লিট ফেস্ট। প্রথমবারের মতো খ্যাতনামা ব্রিটিশ জার্নাল ওয়াসিফিরি বাংলাদেশকে উৎসর্গ করে একটি সংখ্যা করেছে সেটির প্রকাশনা উৎসব হবে এখানে। এ ছাড়া বেঙ্গল লাইটসের জার্নাল, সিক্স সিজন রিভিউসহ বেশ কয়েকটি জার্নাল আসছে এই আয়োজনে।
কাজী আনিস আহমেদ জানান, ঢাকা লিট ফেস্টকে সামনে রেখে ঢাকা ট্রান্সলেশন সেন্টার নতুন অনুবাদক প্রজন্ম তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। ভারতীয় অনুবাদক অরুনাভ সিনহার তত্ত্বাবধানে ‘লাইব্রেরি অব বাংলাদেশ-এর উদ্বোধন হবে এই আয়োজনে। লাইব্রেরি অব বাংলাদেশ শিরোনামে এবার প্রকাশিত হতে যাচ্ছে সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক ও সৈয়দ মনজুরুল হকের বই। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে আরো বই প্রকাশ হবে, এমনকি তরুণদের কবিতাও প্রকাশিত হবে।
সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে সাহিত্য সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে চিনুক এটাই এই উৎসবের প্রতিপাদ্য। তিনি আরো বলেন, এই আয়োজন সব শ্রেণির পাঠক ও সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য। উৎসবের আরেক পরিচালক আহসান আকবর, তাঁর বক্তব্যে তিনদিনের অনুষ্ঠানের হাইলাইট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখানে স্বনামধন্য বাংলাদেশি কবি নির্মলেন্দু গুণ, মুহাম্মদ নূরুল হুদাসহ আরো অনেকে থাকবেন। এ ছাড়া আসছেন ভারতীয় কবি অরবিন্দ কৃষ্ণ মেহরোত্রা। ভারতীয় কবি সুদীপ সেনের সম্পাদনায় বাংলাদেশি লেখকসহ বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক কবির একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হবে এই আয়োজনে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সাহিত্য অঙ্গনে সাড়া জাগানো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত গালিব হাসানের বই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসবে এই উৎসবের মধ্য দিয়ে। ফিলিস্তিনের কবি ঘাসান জাকতান আসছেন তাঁর কবিতা ও বই নিয়ে। তিনি বলবেন ১৩ বছর বয়স থেকে গৃহহীন হয়ে যাওয়ার গল্প। প্রথমবারের মতো কিউবা থেকে আসছেন সাহিত্যিক হোসে ফার্নান্দেজ ইয়োস। এ ছাড়া উৎসব চত্বরে পাওয়া যাবে পাকিস্তানের ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে একটি বই। এতে থাকছে কি করে বাংলাদেশিরা বঞ্চিত হয়েছে পাকিস্তান আমলে। ক্রিকেট নিয়ে বিসিবির বিক্রয়
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান তরুণ আয়োজকদের সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের সাহিত্য সম্মেলনের অভাব অনেক আগে থেকেই তিনি অনুভব করতেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে একবার সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল। সেই সময়, ভারত থেকে ৭৫ দেশের সাহিত্যিক এবং আরো ছয় দেশের সাহিত্যিকরা এসেছিলেন। এরপর এত বড় আয়োজন আর হয়নি। নতুন সাংস্কৃতিক এই আয়োজনকে তিনি অভিনন্দনযোগ্য প্রয়াস বলে দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, এটি আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির নতুন একটি অভিযাত্রা। তরুণ সাহিত্যকর্মীরা যে যাত্রা শুরু করেছেন সেটি বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে তুলে ধরবে বলেই আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি মনে করেন, এই আয়োজন শুধু বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে না বিশ্ব সাহিত্য প্রাঙ্গণে বাংলার উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। আয়োজকদের একজন হিসেবে তিনি সবাইকে আমন্ত্রণ জানান এবং বলেন, শেষ পর্যন্ত এখানে বাংলা একাডেমি থাকবে।
তিনি মিডিয়াকর্মীদের প্রতি গোটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম আখতারি মমতাজ বলেন, বাংলাসাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার প্রত্যয়ের কারণেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই যাত্রার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তিনি এই উৎসবকে সফলভাবে প্রচারের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, সবার সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় এই উৎসব গণমানুষের হয়ে উঠবে।
সিটি ব্যাংকের সিইও সোহাইল আরকে হোসাইন বলেন, এই ধরনের অনুষ্ঠানের সঙ্গে থাকতে পেরে আনন্দিত। এই ধরনের সাহিত্য বিষয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তিনি ভীষণ কৃতজ্ঞ। সিটি ব্যাংক সবসময় এই ধরনের আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়। তিনি আরো বলেন, ঢাকাকে সিটি অব কালচার হিসেবে তুলে ধরার জন্য যে চেষ্টা তার সঙ্গে সিটি ব্যাংকের সম্পৃক্ততায় তিনি ভীষণ আনন্দিত।
উৎসবের টাইটেল স্পন্সর ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান বলেন, এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে টাইটেল স্পন্সর হিসেবে যুক্ত হতে পেরে ঢাকা ট্রিবিউন পরিবার সম্মানিত। এটি শুধু বাংলাদেশে বিশ্ব সংস্কৃতি নয়, বরং বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশকে প্রবেশাধিকার দেবে। তিনি আরো বলেন, উৎসবের তিনদিন আমরা বলব, শুনব, যুক্তি-তর্কের অংশ নেব। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এবারের উৎসবে অংশ নিতে নিবন্ধন করতে হবে, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাজী আনিস আহমেদ বলেন, বিশ্বের সব উৎসবেই নিবন্ধন করতে হয়। সুশৃঙ্খল আয়োজনের জন্য নিবন্ধনটি প্রয়োজন। তবে উৎসব প্রাঙ্গণে স্পট রেজিস্টেশন হবে।