ঢাকা লিট ফেস্ট
বাংলা একাডেমিতে উৎসবের আমেজ
হরতাল, উৎকণ্ঠা ও নানা সংকট উপেক্ষা করে সকাল বেলায় মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলা একাডেমি প্রান্তর। ঘাসফড়িং কোয়ারের সুরে মুখরিত হয়ে শুরু হয় উৎসব। এর পর পরই প্রধান স্টেজে উঠলেন ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৫-এর তিন পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্ ও আহসান আকবার। তাঁরা জানালেন কী করে তাঁরা ঢাকা লিট ফেস্ট উদযাপনের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন। কাজী আনিস আহমেদ বললেন, বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে বোধগম্য ও সহজলভ্য করার লক্ষ্যেই এই আয়োজন। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাকি দুই পরিচালকও গত পাঁচ বছরের পরিশ্রমের কথা জানালেন। পঞ্চম আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন কী করে এত বড় উৎসব হয়ে উঠলে সেই গল্পই জানালেন তাঁরা।
এর পরই মঞ্চে উঠেন জনপ্রিয় ভারতীয় সাহিত্যিক ও একাডেমিক নয়নতারা সায়গল। তিনি উৎসবের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ভারতের সার্বিক সাহিত্য পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এই সময়ে দেশের উগ্র হিন্দুত্ববাদ নিয়ে সাহিত্যিকরা যে সম্মাননা ও পুরস্কার বর্জন করেছেন তার সমর্থনে বক্তব্য দেন। তিনি তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, কীভাবে প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে পুরস্কার বর্জন।
এরপর মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বক্তব্য দেন। আসাদুজ্জামান নূর একই ছাদের নিচে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সাহিত্যিকদের একই ছাদের নিচে আনার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান। সে সময় হে ফেস্টিভ্যাল থেকে পরিবর্তিত হয়ে ঢাকা লিট ফেস্টের যাত্রা শুরু হওয়ায় অর্থমন্ত্রী এই আয়োজনকে দেশের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে তুলনা করেন এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সে সময় তিনি উল্লেখ করেন, দেশের এই অস্থির সময়ে এত বড় আয়োজন সম্ভবপর হয়েছে কারণ সরকার এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিল। এর পরই তিনি উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
দুপুর ১২টায় প্রধান মঞ্চে কাজী আনিস আহমেদের সঞ্চালনায় শুরু হয় প্রথম সেশন - দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ রাউন্ড। এখানে অংশ নেন ব্রিটিশ সাংবাদিক জন স্নো, নারীবাদী সংগঠন ওয়াওয়ের প্রধান জুড ক্যালি এবং ভারতীয় ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। এই সেশনে বক্তাদের আলোচনায় বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি, তার কারণ ও পর্যালোচনা উঠে আসে।
একই সময় লনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্যারাডক্স শীর্ষক একটি আয়োজন। এটি সঞ্চালনা করেন হিমাল সাউথ এশিয়ার সম্পাদক অনুহীতা মজুমদার। অংশ নেন প্রশান্ত ত্রিপুরা, কাসিয়া পেপরোস্কি ও গর্গ চ্যাটার্জি। বক্তারা এখানে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘু সংকট নিয়ে আলোচনা করেন। আফসান চৌধুরী বলেন, যা ঘটছে যা ব্যাখ্যা করা হয় তাই প্যারাডক্স হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
দুপুরে বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে উঠেন সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ও প্রখ্যাত অভিনেতা আলী যাকের। অভিনেত্রী বন্যা মির্জার সঞ্চালনায় দুই খ্যাতিমান অভিনেতা তুলে ধরেন তাঁদের অভিনয় জীবনের গল্প। অভ্যাগতরা এটিকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সেশন বলে দাবি করেন। দুই অভিনেতার গল্পগুলো কখনো হাসিয়েছে কখনো কাঁদিয়েছে উপস্থিত দর্শকদের।
এ ছাড়া বিকেলে কবিতা পড়েন তিন প্রজন্মের কবিরা। রুবি রহমান, আসাদ মান্নান, নাসির আহমেদ, মুস্তাফিজ শফি থেকে শুরু করে শূন্য দশকের কবিরাও এ সময় নিজেদের কবিতা পাঠ করেন। নানা আয়োজনে প্রথম দিনের আয়োজন শেষ হয়।
শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে এই প্রাঙ্গণে কায়সার হক অনূদিত মনসা মঙ্গল বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। একই সময় পরিবেশিত হবে বেহুলার লাচারি। এদিনই কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলবেন তাঁর জীবনের গল্প। এ ছাড়া যাত্রা শুরু করবে ঢাকা ট্রান্সলেশন সেন্টারের তত্ত্বাবধানে লাইব্রেরি অব বাংলাদেশ। এ উপলক্ষে প্রকাশিত হবে হাসান আজিজুল হক ও সৈয়দ শামসুল হকের ইংরেজিতে অনূদিত দুটি গ্রন্থ। এ ছাড়া বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের স্মৃতিচারণামূলক বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করা হবে।