শেষ হল সাত দূতাবাসের ‘আর্ট উইকেন্ড’
বাংলাদেশে অবস্থিত সাতটি দূতাবাসের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী আর্ট উইকেন্ড শেষ হয়েছে আজ শনিবার। ব্রাজিল, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও কানাডীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই আর্ট উইকেন্ডে অংশ নেয় বাংলাদেশে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিত্রশিল্পী, আলোকচিত্রী ও সংগঠন।
তরুণ ও সম্ভাবনাময় শিল্পীদের কাজগুলো আরো বড় পরিসরে ছড়িয়ে দিতেই এই আর্ট উইকেন্ডের আয়োজন করে দূতাবাসগুলো।
বাংলাদেশে অবস্থিত নেদারল্যান্ডসের দূতাবাসের আয়োজনে প্রদর্শনীটি ছিল রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে।
এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শামসুল আলম হেলাল ও ভারতীয় আলোকচিত্রী রাজেশ রামকৃষ্ণানের আলোকচিত্র, ডাচ ভাস্কর পেট্রা দে ভ্রির ভাস্কর্য ও ঢাকার ব্রিজ ফাউন্ডেশনের দুজন প্রতিবন্ধী চিত্রশিল্পী মো. সোহেল আহমেদ ও মাশিয়াত তানিন সাজের আঁকা ছবি প্রদর্শিত হয়।
আয়োজন সম্পর্কে বাংলাদেশে নিযুক্ত ডাচ দূত লিওনি মার্গারিটা কিউলেনারি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা সাতটি দূতাবাস মিলে এই আয়োজন করেছি। প্রত্যেক দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে দুদিন ধরে বিভিন্ন শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। গত বছর প্রথমবারের মতো আমরা এই আয়োজন করি। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজনটি করছি।’
এই আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ শিল্পীরা কীভাবে উপকৃত হবেন জানতে চাইলে ডাচ দূত বলেন, ‘এর মাধ্যমে তরুণ বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য আমরা একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই এবং এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে অনেক মেধাবী তরুণ শিল্পী রয়েছেন যাঁরা ভালো কাজ করছেন। এখানে যেসব শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে সেগুলো দর্শনার্থীরা চাইলে এখান থেকে কিনতেও পারবেন। এতে এসব শিল্পীর ক্ষেত্রে একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে যার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের কাজ নিয়ে আরো বড় পরিসরে পৌঁছাতে পারবেন।’
ব্রিজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট নাতাশা ইশরাত কবির বলেন, ‘২০১৩ সালে আমাদের এই সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আর্থিক সহায়তায়। এরপর আমরা ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে শেক্সপীয়রের রোমিও জুলিয়েট নিয়ে একটি ভিন্নধর্মী কাজ করি। যার নাম ছিল ‘আ ডিফারেন্ট রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’। প্রতিবন্ধী শিল্পীরা এই নাটকে অভিনয় করেন। আমরা চেষ্টা করছি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের কীভাবে শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। এখানে আমাদের দুজন চিত্রশিল্পীর কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে। শুধু চিত্রকলা নয় আরো শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে তাদের সংযুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করছি। যেমন : ফ্যাশন ডিজাইনিং বা মুকাভিনয়ের ক্ষেত্রেও কথা বলা বা কানে শোনার ব্যাপারটা না থাকলেও ভালোভাবে কাজ করা যায়। এসব বিষয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’
ডাচ ভাস্কর শিল্পী পেট্রা দে ভ্রি তাঁর ভাস্কর্য সম্পর্কে বলেন, ‘আমি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থেকেছি। ইথিওপিয়া ও বলিভিয়াতে আমি ছিলাম। বাংলাদেশে এসে দেখলাম এখানে অনেক রঙের উপস্থিতি রয়েছে। বাকি পৃথিবীতে আমি এত রং দেখতে পাইনি। বাংলাদেশের এই রঙিন বিষয়টাকে আমি তুলে ধরতে চেয়েছি। আর আমি নারীদের নিয়েই মূলত কাজ করি। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে যে কাজগুলো সেখানে বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের প্রতিকৃতি আমি তুলে ধরেছি।’
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া আলোকচিত্রী শামসুল আলম হেলাল বলেন, ‘আমি ছবিগুলো তুলেছি পুরান ঢাকার সুইপার কলোনিতে। ছবি তোলার ক্ষেত্রে আমি স্টুডিও টেকনিক ব্যবহার করি। এজন্য দেখবেন সব ছবির পেছনে একটা লাল ব্যাকড্রপ রয়েছে। আর সুইপার কলোনির মানুষদের নিয়ে কাজ করেছি কারণ নিজেদের পেশার কারণে তারা সবসময় নিজেদের আড়াল করে রাখার চেষ্টা করে। আমি চেষ্টা করেছি তাদের সেই জীবনকেই সবার সামনে তুলে ধরতে।’