ঈদের আয়োজন
শুভ্রনীলের সাগরের ১০ কবিতা
দূরের জনপদ
তোমার চোখে বড্ড ভিড়! তাই ওদিকে বিশেষ যাই না...
ইদানীং খুব বেশি বলতেও ইচ্ছে হয় না আমার। ধরে নেই, আমি ‘আ’
বলতেই তুমি বুঝে নেবে...
ফেরা
বৃষ্টির জল ঢুকে এলো মনের অন্দরে। চোখ বোজ, এঁকে দেব
অনিঃশেষ চিৎসাঁতার...
আমরা হাতমুড়ে বসতেই জল জমে গেল! টুংটাং, কাঁটাচামচে উঠে আসছে সন্ধ্যে।
আরেকটি চামচে ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিচ্ছি রাত, আর ফট করে ঘোলা হচ্ছ তুমি...
তুমি, আমাদের কথা জান! জানতে, আমরা ঠিকই ভোর অব্দি বসে থাকব। কেবল
আমাদের অলক্ষ্য ইচ্ছেগুলো ইলিশের আয়ুর মতন; তাকে জলের কাছে নিয়ে যাও....
দূরত্ব
তুই হাজারবার বললেও, মাঘের নিশুতি অর্থ সেই একই থাকবে। শীতের মন্তাজ বলে যা তুই পড়াতে চাইলি, তাতে ছিঁড়ে ছিঁড়ে এলো নদী! নদী শুকিয়ে গেলে আমাদের বড় কষ্ট- দিনকে দিন কমে যায় হৃদয়ের নাব্যতা। পলির গুরুত্ব তুই জানিস। তুই এও জানিস, সাব-অল্টার্নে আমার কী ভূমিকা। বরং তোর পুরোনো কোষেরা মরে এলে, খানিকটা পলি মেখে নিস। কেউ আঁচড় কাটলে, ফুটে উঠবে গাত্রচিহ্ন...
রাস্তাপার আমি একলাই হতে পারি। শুধু মাঝপথে কেউ ছেড়ে গেলে, পথের দূরত্ব আমার অবাধ্য হয়ে ওঠে....
কান্না, ছুঁয়ে এসো কেতকী
মৃত্যু কদাচ কথার অবসর আনে। অবসর? আমি অবশ্য অবচ্ছেদ লিখতে চাইব। নারকেল পাতার ভেতর চাঁদ - রাত্রির আগে...
কিছু কথা চিরকাল গলা বেয়ে চোখ, উজানী। বৃষ্টি পুড়ছে বেঘোর। পাখিরা বট গাছে গিয়ে থামে। ‘তুমি-আমি’ শব্দেই শুধু কাছে - স্বাভাবিক?
ইটস্ কম্প্লিকেটেড
সবকিছু এত প্রকাশিত তবু- কোথাও ‘লাইক’ দিচ্ছি না আমি! আমার ইচ্ছে- তোমার আরো অবচেতন পড়ে ফেলা...
তোমার মৃত কোষ ও টিপ বোতাম তুমি ইমেজ আকারে দিতে পার; আমি সব ফরম্যাটই পড়তে পারি। দিন দুয়েক যাক, এত জলদি কীসের? মতামত আমি মনখুশি খিলিপানে সাজিয়ে দেব...
পাখি উড়ছে, দৃশ্য উড়ছে না
পাখি ও দৃশ্যেরা-
আমার নীল দেয়ালে ছায়া হচ্ছে....
অরণ্যের মুখোমুখি
আর আমাদের শরীর বেয়ে ঝিঁঝিঁ নামে। ঝিঁঝিঁপোকা রাতখেকো, হঠাৎ হঠাৎ ডেকে ওঠে ডাকনাম। এভাবে চলতে থাকলে আবারও দেখা হবে। যে পথ শহরতলী ছেড়ে হৃদয়ছড়া গেছে, তার শেষমাথা আমাদের বাড়ি। এলানো ঘুম, এলানো ক্লান্তি - উঠানে ছড়ানো আমাদের ভোরবেলা। চিঠি লিখলে আমরা উত্তর দিই। বৃষ্টির জলে ধোওয়া ভানুগাছ, লেবুপাতা মুড়ে...
হেঁটে হেঁটে আমরা পাহাড়ের কাছে আসি। পাহাড়, নিস্তব্ধ আঁধার- ফোঁপানো ইচ্ছেগুলো লিখে রাখা যায়। তোমাকে বর্ণপরিচয় জানতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। উপপাদ্য-সম্পাদ্য, তাও না। চিরহরিৎ দুঃখরা তো আদর্শলিপি পড়ে না...
তুমি এলে নিয়ে যাব নুড়িপথ। দেখবে, অনেক হাঁটার পর ক্রমশ মুছে যায় পিছুটান...
জরুরি বিজ্ঞপ্তি
কাঁটাবন-জুঁইতলা ঘুরে ঘুরে ওরা নিয়ে আসে জ্বর। হাফভাড়ায় জ্বর যখন ইচ্ছে নামে। নতুন বাড়ির ছাদের নিচে থার্মোমিটার নেই। অনেক ঘামের পর দেয়ালকে দোয়েল বলে মনে হয়- এই আগুনে উনুন ধরাবি মা? জ্বর এলে আমার ভাসানো নৌকো ফিরে আসে আর সন্ধ্যাতারা এঁকে দেয় কথাময় তন্দ্রার পালক...
মাগো, আমায় জলপট্টি দে! চারপাশে উপত্যকার মতো কপাল। আমি তোর আঁচল মেখে আছি। ঝিলমিল জল, গড়িয়ে যাচ্ছে চাঁদ....
পর সমাচার, এখানে বর্ষাকাল
পৃথিবীর পথে রয়ে গেছি এতকাল, জেগে। শরীরে অগুনতি চাঁদের ছায়া। হঠাৎ চোখ পড়লে তাঁতঘর ঠাহর হয়। আজ জল না মুছেই এসে পড়েছি। জলে পদ্ম থাকলে এভাবে ফিরিয়ে দিত কেউ? চোখে ভিড়, ঘুমের ভেতর সরে যাচ্ছে কাঁথা- তুই আর আগের মতো নেই! আমি বিকল্প বৃষ্টির প্রস্তাব করি...
গেল আষাঢ়ে যে ডালে ছিল ফুল, আজ কেউ নেই সেখানে! অর্থ হয়, স্বীয় ঝোঁকে ফুটে ওঠে ফুল। আমার নিভৃত রাত্তির মেখে নিয়ে, ছিঁড়ে দেয় শাখার বন্ধন....
অন্তর্বর্তীকালীন
বড্ড অসহ্য লাগছে পৃথিবীর ভিড়।
তোমার নিঃশ্বাস আলাদা করা যাচ্ছে না...
ভীষণ চেনা পথ বহুদিন পর হাঁটলে রোগাটে লাগে, লতানো। আমি সেই ধুলো চাই যারা এই আষাঢ়ে কাদা হয়ে গেছে...
শারদে সপ্তমী
অক্ষর, যাও গিয়ে বলো - তার জন্য একাকাশ মেঘ এতক্ষণে রওনা হয়ে গেছে। তাকে আমার কথাও বলো। বয়ঃসন্ধি থেকেই যে তার পিছু পিছু, সে পুড়ছে অক্লেশ। যেমনটা আকাশ পোড়ে কাশফুল জ্বরে...
শাদামেঘ আজন্ম রানার। অজ্ঞাত ইচ্ছেসমেত সে তোমার মনে শরৎ বিলি করে...
কবি পরিচিতি
শুভ্রনীল সাগরের জন্ম বাংলাদেশের খুলনায়। কবিতা ও অন্যান্য সৃজনশীল লেখালেখির পাশাপাশি শুভ্রনীল ছবি তুলতে ভালোবাসেন। তাঁর আরো শিল্প প্রবণতার মধ্যে রয়েছে সঙ্গীত, ভ্রমণ, মনোবিজ্ঞান নিয়ে উৎসুক ঘাঁটাঘাঁটি ইত্যাদি।