ঈদের আয়োজন
নিশীথ দাসের ১০ কবিতা
প্রোফাইল স্ট্যাটাস : সিঙ্গেল
মিস শ্রমনা বন্দ্যোপাধ্যায়, নাকের পাশে তিল, ওয়ান পিস- কলকাতায় থাকে,
রবি দা গলায়, হারমোনিয়ামে দৌড়ায় সলতে আঙুলের চোখ, স্কেলে রেওয়াজ-
পার্কে ভ্যানিটি ব্যাগ, ৪৫ ডিগ্রি ফিক্সড ডিপোজিটে, দূরে সোয়া হাত- রাখে সেলফির প্রডাক্ট টুকে
ডাকু চোখের ফরমেটে সঙ্গীতা হালদার, শ্রীপর্ণা দে- হাজার গিগাবাইটের আনন্দ,
তরতরিয়ে ঢালু একটি দিন হয় আরো, কিংবা পানের বরজের ধার, হেঁটে যাওয়ার-
জানা গেল, তাবিজের খোপ থেকে বাকবাকুম উড়ল আচমকা
স্পেস বাড়াল ব্যাংকের ডাবল স্কিম, গিঁটেবাতে ফুটছে চা-এর কাপ
ডুব হলো বেনোফুলের একটি লেটেস্ট ডিজাইন, ডান গালে হাত শুকাচ্ছে
মুখে শিস ফুঁকানো লাইনবাঁকা ভঙ্গি, রাতকানা; বিল্ডিং কোডে
হারিয়ে ফেলেছে ফায়ারব্রিগেডের পাসপোর্ট ও বালুভর্তি ট্রাকের সিগন্যাল।
রাজত্ব
যে পাশটায় শুই, সূর্য এবং জানালা দুটোই দূরে- সূর্যে থাকে তার গ্রীষ্মের হাত।
গলিয়ে এসে দোলনা ভেজায় ঘরের কোণে, যখন পাই টের, চলে যায় সে। রেখে
যায় ঘামের মোহর। আমার জমিদারি অভ্যাস, এই একটি পেয়েছি, ১০টায় উঠি
আর কিছু পাইনি ঘুম ছাড়া উত্তরাধিকার সূত্রে, বাবা ছেড়েছেন অক্টোবরে, পৃথিবীর
রাজত্ব- এখন আমি ধরে, শাহজাহানের পর আওরঙ্গজেব যেমন। ঘুমে কাঠ কাটি,
ধান মাড়াই, লুঙ্গিটাও নাড়াচাড়া করি, শুকিয়েছে কি না-
পরিশোধ
আঁধার বেঁকে যাচ্ছে বাড়ির সামনে- কিসের অছিলা?
ঠিক দূরে আকাশ হেলে পড়ে যে গ্রামে
মিতা পাতিয়েছি, হাওয়া ও গরুর গাড়ি টানার বিনিময়
সেখানে আমার নাড়ির রান্নাঘর আছে, কুয়ো আছে এর পেছনে
এখানকার জলের গল্প আছে, দিদার মুখে বহুদিন শুনেছি;
গল্প মরেনি তার মতো অসুখে,
কুয়ো ডাকছে আমায়, এর পাশে ডালিমও,
লুকিয়ে লুকিয়ে যে বীণ বাজাই, জড়িয়ে ধরার,
কদিনই-বা সময় দেই উজার করে;
সবই তো খেয়ে নিচ্ছে মিউ মিউ করপোরেট
প্লেট ধরে খেতে দেই বাধ্য হয়ে, কী করব?
ভীষণ ঋণী আছি, খাজনা দেইনি তাকে, জমেছে অনেক-
এতই সোজা পরিশোধ, একটা জনম, ঢং ঢং ঘণ্টা?
কেন সবুজ, লাল, ভাঙচুর না হওয়া অবৈধ নয়
কেন- ‘কেন নই সবুজ আমি- কেন লাল, হলুদ, ভাঙচুর নই
কেন উন্মুখ রাস্তা নই- কেন পাখিদের ভালো লাগা নই
কেন একটি দুধদাঁত পড়া কালো কিশোরীর হাসি নই
কোনো প্রভাত নই, কেন যৌনপল্লির দালাল নই, খদ্দেরও নই
কেন রাষ্ট্রের বিশ্বস্ত গোলাম নই,
কেন হাতিয়া বিলের ভাঙা ব্রিজের সুস্থ হওয়ার বাসনা নই-’
ইত্যাদি হওয়া অবৈধ নয়।
এ মর্মে কার কাছে পাঠাবো নোটিশ?
আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হলো।
মাদি প্রাইভেট কার
বৃষ্টির পর হাজার মাদি প্রাইভেট কার ঘোঁৎ ঘোঁৎ ছোটে
অবিরাম বেহুঁশে দিগ্বিদিক
ট্রাফিক সিগন্যাল কোন শালা
অথবা পথচারী-
একটি পাবলিক বাসের বিপরীতে,
রোগবালাই, প্লাস্টিকের বোতল মুখ থুবড়ে থাক পড়ে
ঘড়িতে ঝুলছে অফিস টাইম
ফুটপাথ টাইপের স্বল্পমূল্যের হরমোনগুলো জ্বলছে যন্ত্রণায়
নেই যন্ত্র শাসনের কাটা-কম্পাস, নৈতিকতার প্রবন্ধ
ফলে গুহায় ঢুকে যাচ্ছে নতুন নতুন ব্র্যান্ডের মাদি, চকচকে
আরো নামানোর কৌশল চলছে
মাদির চাপে পাবলিক বাস সংখ্যালঘু- ভারত পালাচ্ছে
স্বেচ্ছাচার
ভালোবাসা উইড্রো করতে পারি
সংসদের যেকোনো অধিবেশনে
স্বেচ্ছাচার আমারও আছে এক লাইনে, পুড়ে যাবে-
পলক ফেলার চোখও খুঁজে পাবে না দেশান্তরী বিবিজান
কামানের অতি ব্যবহার করেছি নিষিদ্ধ,
খেয়েপরে বেঁচে আছি রেলওয়ের ওভারব্রিজে, এই আর কি!
তুমি-ই খোঁজ রেলের বগি, মারদাঙ্গা ঘর, কার্পেটের চুমু
মাল্টিপ্লাগ
বিছানায় নৌযুদ্ধের কতিপয় স্পর্শঘ্রাণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে,
গায়ে তাপ কুড়োচ্ছে একনাগাড়ে
চোখেমুখে ঝিলিকবাতির উৎসব হচ্ছে
এসব প্রান্তিক বেলকুনির ছাপ গুছিয়ে-টুছিয়ে
একটা যেনতেন ময়দার মাল্টিপ্লাগ বানাই, যাতে বোঝা যায়-
গুটি কয়েক ছিদ্র, টুপিন লাগানোর
যা থেকে সবখানে সংযোগ নেয়া যায়
তুমি, সে রকম- নয়তো কি, হুম!
কুড়ি পাতা ভাইবোন
ভাঙারোদ, প্রার্থনায় হাত তুলে থাকি-
খুন লেটেস্ট ফ্যাশান,
ধর্ষণও জুড়ে গেছে এর সাথে
আমরা এক গাছের কুড়ি পাতা ভাইবোন
উদ্বিগ্নতা আমাদের পাড়া-প্রতিবেশী কেউ নয়
নাটাই থেকে সুতো খসায় তাকে আমরা চিনি
পোষাপুষির সংসার
বাঘ পোষে বন
বালু পোষে জল
রাগ পোষে মন।
ফুল পোষে গাছ
মাছ পোষে নদী
ঢেউ পোষে নাচ।
বেপরোয়া
সূর্য হুইসেল দেয়
ঘামের ভিড়ে জমে ঘাম, তার দেখা কই,
এলোপাতাড়ি বাতাস এত দুষ্টু কেন?
চতুর্দিকের দূরত্ব খেয়ে আটকে গেছ বটগাছের দরবারে?
হও আরো স্থির, ট্রেনের কামরার আদলে গাইবান্ধা স্টেশনে
খুনোখুনি হোক নিজের সাথে আজ- খুনি স্বীকৃত হই এই পাবলিক শো’তে
বেপরোয়া হওয়ার দরকার ছিল
বেওয়ারিশ হওয়ার আগেই
কবি পরিচিতি
নিশীথ দাস। জন্ম : ২৭ আগস্ট ১৯৮৭। জন্মস্থান : উলিপুর, কুড়িগ্রাম। পৈতৃক নিবাস : গাইবান্ধা।