ইস্পাত থেকে জেগে ওঠা শিল্প
মানুষ কত ভাবেই না তার অনুভূতি প্রকাশ করে, কখনো চোখের জলে, কখনো হাসিতে, কেউ কবিতা-গল্প-গান-নাটকসহ বিভিন্ন শিল্পকর্মে। সে যে মাধ্যমেই হোক মানুষ তার অনুভূতি প্রকাশ করবে এটাই তার জন্মগত সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু ভাঙা-উচ্ছিষ্ট ইস্পাত খণ্ড দিয়েও যে শৈল্পিকভাবে অনুভূতি প্রকাশ করা যায় তারই একটি উদাহরণ ‘কঠিন অনুভূতি’ শীর্ষক ভাস্কর্য প্রদর্শনী।
অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে ‘HARD EMOTIONS / কঠিন অনুভূতি’ শিরোনামে শিল্পী আরহামউল হক চৌধুরীর একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী।
বিভিন্ন ওয়ার্কশপে যেসব ভাঙা ও উচ্ছিষ্ট উপকরণ ফেলে দেওয়া হয়েছে তারই অংশ দিয়ে সৃষ্টি করা আরহামের তৈরি ভাস্কর্যগুলো। ভাস্কর্যগুলোর প্রতিটি ইস্পাত খণ্ড এক তীব্র মানসিক সন্নিধি বহন করে, যা এ সময়ের সমাজ ব্যবস্থাকে প্রকাশ করে কৌতুকপ্রদ ভাবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তিনজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি। প্রদর্শনীতে মোট ২৪ ভাস্কর্য প্রদর্শিত হচ্ছে । প্রদর্শনীর শিল্পকর্ম বিক্রয়লব্ধসমুদয় অর্থ পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) কল্যাণ তহবিলে প্রদান করা হবে।
যে ভাস্কর্যগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে সেগুলো সাভারে অবস্থিত পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) নির্মিত। এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য হুইলচেয়ার, স্ট্রেচার, লংট্রলি ও ক্র্যাচের মতো বিভিন্ন প্রকার গতিশীল উপকরণ তৈরি করা হয়। এই সংগঠনটির সাথে বিগত ১৬ বছর ধরে শিল্পী আরহাম একজন সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে আসছেন।
এটি আরহামউল হক চৌধুরীর ১৩তম একক শিল্প প্রদর্শনী। এর আগে বেঙ্গল গ্যালারিতে ২০০৫ সালে শিল্পীর ‘ভস্ম থেকে’ শিরোনামে একই ধরনের ভাস্কর্যের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। নৃবিজ্ঞানে শিক্ষা প্রাপ্ত শিল্পী আরহাম আসবাবপত্র, বাংলা-ক্যালিগ্রাফি, প্রাকৃতিক-রং এবং বনসাইয়ের মতো বিভিন্ন মাধমে এককভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রদর্শনী উপস্থাপনে অগ্রদূত।
আরহামউল স্থাপত্যিক-নৃবিজ্ঞান পটভূমিতে শিকড় ধারণ করে বলেই তাঁর শিল্পকর্মে মানবিতার সম্পর্ক উপস্থাপিত হয়। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য থেকে বের হয়ে অন্যদের নিয়ে চিন্তা ভাবনায় অনুপ্রাণিত করাই এই প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য।
প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।