শেষ হলো আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব
বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত ১৪তম ‘আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব ঢাকা, ২০১৬’ শেষ হলো গতকাল শনিবার। জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। এ সময় তিনি প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিভাগে বিজয়ী চলচ্চিত্রকারদের পুরস্কৃত করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. শি ফি গ্যারিন নুগ্রহ, নীলোৎপল মজুমদার, চালিদা উয়াম্বুমরনজিৎ, ড. ধাম্মিকা দিশানায়াকা, আজার ফারামারজি, সৈয়ন কিম, সার্গেই আনেশকিনসহ দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকাররা। আরো উপস্থিত ছিলেন ২০১৬ সালের ১৪তম আসরের উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান, নাট্যব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্রকার নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং উৎসব পরিচালক সৈয়দ ইমরান হোসেন কিরমানী, বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন রাজুসহ বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের নেতারা ।
১৪তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবে সমাপনীতে প্রথমে বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক সৈয়দ ইমরান হোসেন কিরমানী। তিনি তাঁর বক্তব্যে দেশ-বিদেশ হতে আগত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘সবার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিই এবারের উৎসবটিকে পরিপূর্ণতা দান করেছে।’
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে উৎসবে আগত সব বিদেশি অতিথিদের সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এর পর ১৪তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী দিনে উৎসবে প্রদর্শিত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে চারটি ক্যাটাগরিতে ছয়টি পুরস্কার প্রদান করা হয় ।
ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন-ফিকশন বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয় রাশিয়ার চলচ্চিত্রকার জর্জ পরোটভ পরিচালিত ‘ফ্যামিলি অফলাইন’ । একই বিভাগে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হয়েছে ইরানীয়ান চলচ্চিত্রকার ইসমায়েল মোনসেফ পরিচালিত ‘আর্দাক’। ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন-ফিকশন বিভাগে জুরির দায়িত্ব পালন করেন গ্যারিন নুগ্রহ (চেয়ারপার্সন) (ইন্দোনেশিয়া), অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম (বাংলাদেশ), আজার ফারামারজি (ইরান)। ১৪তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব ঢাকা, ২০১৬-এর পক্ষ থেকে বিজয়ী শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারকে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং নগদ এক হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করা হয় । স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত চলচ্চিত্রকারকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় ।
ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন-ডকুমেন্টারি বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয় বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকার সাইফুল ওয়াদুদ পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘ঝলমলিয়া- দ্য স্যেকরেড ওয়াটার’। ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন-ডকুমেন্টারি ক্যাটাগরিতে জুরির দায়িত্ব পালন করেন নীলোৎপল মজুমদার (চেয়ারপার্সন) (ভারত), মার্শেল মাইগা (জার্মানি), মাহমুদুল হোসেন (বাংলাদেশ)। বিজয়ী শ্রেষ্ঠ চলিচ্চিত্রকারকে ১৪তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব ঢাকা, ২০১৬-এর পক্ষ থেকে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং নগদ এক হাজার ইউএস ডলার প্রদান করা হয়।
নেটপ্যাক (নেটওয়ার্ক ফর এশিয়ান সিনেমা) ফিকশন এবং ডকুমেন্টারি মিলে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয় আফগান চলচ্চিত্রকার সাদাম ওয়াহিদি পরিচালিত ‘ম্যারি মাদার’ । নেটওয়ার্ক ফর এশিয়ান সিনেমা ক্যাটাগরিতে মাননীয় জুরির দায়িত্ব পালন করেন চালিদা উয়াম্বুমরণজিৎ (চেয়ারপার্সন) (থাইল্যান্ড), ড. ধাম্মিকা দিশানায়াকা (শ্রীলংকা), গোলাম রাব্বানী বিপ্লব (বাংলাদেশ)। নেটপ্যাকের পক্ষ থেকে বিজয়ী শ্রেষ্ঠ চলিচ্চিত্রকারকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় ।
তারেক শাহরিয়ার বেস্ট ইনডিপেনডেন্ট শর্ট সেকশনে বাংলাদেশি তরুণ প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয় বাংলাদেশি তরুণ চলচ্চিত্রকার তাসমিয়াহ আফরিন মৌ পরিচালিত ‘স্টেটম্যান্ট আফটার মাই পোয়েট হাজবেন্ডস ডেথ’। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকার মো. আবিদ মল্লিক পরিচালিত ‘পথ’ চলচ্চিত্রটি একই বিভাগে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হয়। তারেক শাহরিয়ার বেস্ট ইনডিপেডেন্ট শর্ট ক্যাটাগরিতে জুরির দায়িত্ব পালন করেন জাহিদুর রহিম অঞ্জন (চেয়ারম্যান), ড. সাজেদুল আউয়াল ও শবনম ফেরদৌসি। এই বিভাগে বিজয়ী শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারকে ১৪তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব ঢাকা, ২০১৬-এর পক্ষ থেকে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং নগদ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয় । স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত চলচ্চিত্রকারকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
পুরস্কার প্রদান করার পর উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান, নাট্যব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্রকার নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি অনুষ্ঠানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারপার্সন আবুল খায়েরসহ অন্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এত বড় পরিসরের একটি উৎসব আয়োজনে আর্থিক স্বল্পতা আমাদের আছে। কিন্তু বাংলাদেশ অনেক সমৃদ্ধ একটি সংস্কৃতি ধারণ করে। তাই আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে আমরা সাহস পাই এত বড় একটি উৎসব আয়োজন করার।’
এরপর বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড. জাকির হোসেন রাজু। তিনি বলেন, ‘১৪তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দিনে এসে আমার দ্বৈত অনুভূতি হচ্ছে। আমি এই ভেবে আনন্দিত যে, এই আটদিন আমরা দেশ-বিদেশ হতে আগত চলচ্চিত্র প্রেমীরা সবাই একসাথে গল্প ও আড্ডায় মেতে ছিলাম। কিন্তু এই মিলনমেলার সমাপ্তি হচ্ছে আজ এই ভেবে আমি বেদনার্ত হচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, আশির দশকের শেষ দিকে আমরা বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং এই ধারায় চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহীরা বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম প্রতিষ্ঠা করি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেই সংগঠন এবার ৩০ বছরে পদার্পণ করছে।’
এরপর বক্তব্য দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান নূর এমপি। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামকে ধন্যবাদ জানাই এত বড় পরিসরের একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করার জন্য। আরো ধন্যবাদ জানাই আজ যারা শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য পুরস্কৃত হলেন। আমি আশা করব আপনারা ভবিষ্যতে আরো ভালো গল্প ও ভালো মানের ছবি আমাদের উপহার দেবেন।’
আসাদুজ্জামান নূর আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ সব ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও গোষ্ঠীর মিলনস্থল । এ দেশের সব ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা পালন করি। কিন্তু জঙ্গিবাদের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত কিছু সন্ত্রাসী চায় না এ দেশে এই সম্প্রীতি বজায় থাকুক। সম্প্রতি জঙ্গিরা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা করে, নির্মমভাবে হত্যা করে এ দেশে আগত বিদেশি অতিথিদের। তারা ভেবেছিল এ ধরনের হামলা চালানোর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। যার প্রমাণ আপনারা। যাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চলচ্চিত্রের ভালোবাসার টানে আমাদের দেশে চলে এসেছেন। আপনাদের তাই আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’