নাট্যধারার ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
নাট্য সংগঠন নাট্যধারা ৩০ বছর পেরিয়ে আজ শনিবার (২৪ জুন) ৩১ এ পদার্পণ করেছে। সুস্থ নাট্যচর্চার লক্ষ্যে কয়েকজন সাহসী নাট্যকর্মীর উদ্যোগে ১৯৯৩ সালের এই দিনে গঠিত হয় নাট্যধারা। দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আজ বিকেলে দলের নাট্যকর্মীদের নিয়ে নাট্যআড্ডার আয়োজন করেছে নাট্যধারা।
নাট্যধারা নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও প্রগতিশীল মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেয়। পেশাদারী মনোভাব নিয়ে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের চেতনায় মঞ্চে এবং পথে গত ৩০ বছর ধরে নাটক করে নাট্যধারা নাট্যামোদী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। নাট্যধারার কর্মীরা যেমন প্রাণবান, তেমনি সংস্কৃতিবান। মুক্তিযুদ্ধোত্তর সংস্কৃতি চর্চার প্রধান যে শাখা আমাদের মঞ্চনাটক, সেই মঞ্চ নাটককে আরো পত্রে-পুষ্পে পল্লবিত করাই নাট্যধারার উদ্দেশ্য।
নাট্যধারার প্রযোজিত মঞ্চনাটকগুলো হলো- শেক্সপিয়র প্রণোদিত ‘হ্যামলেট ওহ্ হ্যামলেট’, রচনা বিপ্লব বালা ও নির্দেশনা আশীষ খন্দকার। ‘মেঘ’, রচনা উৎপল দত্ত ও প্রয়োগ অলোক বসু। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর উপন্যাস অবলম্বনে ‘চাঁদের অমাবস্যা’, নাট্যরূপ মনজুরুল হাসান দুলাল এবং নির্দেশনা অলোক বসু। ‘অগ্নিজল’, রচনা গিরিশ কারনাড ও নির্দেশনা আশীষ খন্দকার। ‘ঘরামি’, রচনা অলোক বসু ও নির্দেশনা মাসুদ পারভেজ মিজু। ‘অতীশ দীপঙ্কর সপর্যা’, রচনা ও নির্দেশনা অলোক বসু। ‘এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ’, নাট্যরূপ অলোক বসু ও নির্দেশনা দেবাশীষ ঘোষ। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর উপন্যাস অবলম্বনে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’, নাট্যরূপ মনজুরুল হাসান দুলাল ও নির্দেশনা মাসুদ পারভেজ মিজু। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রথের রশি’, নির্দেশনা আশীষ খন্দকার। ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে ‘আয়না বিবির পালা’, নাট্যরূপ ও নির্দেশনা রবিউল আলম; নব-নির্দেশনা লিটু সাখাওয়াত। ‘গররাজি কবিরাজ’ মূল নাটক মলিয়েঁর। অনুবাদ-রূপান্তর ও নির্দেশনা আশীষ খন্দকার। ‘চার্লি’, রচনা ও নির্দেশনা লিটু সাখাওয়াত। ‘স্বর্ণময়ী’, রচনা গাজী রহিসুল ইসলাম তমাল ও নির্দেশনা লিটু সাখাওয়াত।
পথনাটকগুলো হলো ‘বান্দরের কিসসা’, রচনা ও নির্দেশনা অলোক বসু। ‘মাদার’, রচনা অলোক বসু ও নির্দেশনা আলমগীর মোহাম্মদ। ‘দোধারী’, রচনা ও নির্দেশনা লিটু সাখাওয়াত। ‘ক্ষম হে গোপী বাঘা’, রচনা ও নির্দেশনা লিটু সাখাওয়াত। ‘অম্লদহন’, রচনা ও নির্দেশনা অলোক বসু। ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’, রচনা অলোক বসু ও নির্দেশনা লিটু সাখাওয়াত। ‘গাধা তুই মানুষ হবি’, রচনা মোফাজ্জেল সোহাগ ও নির্দেশনা সব্যসাচী চঞ্চল। ‘আবারো বাংলাদেশ’, রচনা ও নির্দেশনা লিজা আসমা। ‘ছি বুড়ি নাইয়া’, রচনা রিয়াদ মাহমুদ এবং নির্দেশনা রিয়াদ মাহমুদ ও কামাল হোসেন। ‘দড়ি’, রচনা ও নির্দেশনা লিটু সাখাওয়াত। ‘টিকটক’, রচনা ও নির্দেশনা লিটু সাখাওয়াত। ‘জলে ভাসা পদ্ম’, রচনা ও নির্দেশনা লিটু সাখাওয়াত। ‘খবিসনামা’, রচনা অলোক বসু ও নির্দেশনা লিটু সাখাওয়াত। ‘পোস্টার’, রচনা রিয়াদ মাহমুদ ও নির্দেশনা কামাল হোসেন ও দিপান্বিতা ইতি। ‘হঠাৎ ব্যামো’, রচনা রিয়াদ মাহমুদ ও নির্দেশনা দিপান্বিতা ইতি। ‘চন্দ্রালোক’, রচনা লিটু সাখাওয়াত ও নির্দেশনা কামাল হোসেন।
এছাড়াও স্টুডিও থিয়েটারে পরিবেশিত নাটক ‘হাতে হ্যারিকেন’, মূল বের্টল্ট ব্রেখট; রূপান্তর অশোক মুখোপাধ্যায় এবং নির্দেশনা দিয়েছেন মাসুদ পারভেজ মিজু।
নাট্যধারা বিশ্বাস করে, মানুষের জীবন ফুলের মতো, প্রতিনিয়ত বিকাশ হবার সম্ভাবনা থাকে। অথচ সে জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে অপশক্তি, রাষ্ট্রের গুটিকয়েক জ্ঞানপাপী, যুদ্ধংদেহী শক্তিশালী মারণাস্ত্র, হীন স্বার্থে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ এবং মৌলবাদের হিংস্র থাবা।
নাট্যধারার প্রধান সম্পাদক আলমগীর মোহাম্মদ বলেন, আজ এই ৩০ বছরের পথচলার সকল কৃতিত্ব নাট্যধারার সকল নাট্যকর্মীর। আমি মনে করি নাটক সমাজের দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে। করোনা মহামারি আমাদের জীবনযাত্রায় এক নতুন অধ্যায় শিখিয়েছে। আমাদের থাকতে হবে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। থিয়েটারও আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। আমাদের নাট্যকর্মীদের একাত্মতাই পারে সমাজের তথা রাষ্ট্রের সকল কলুষকে দূর করতে।