ইউএনওসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ
নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সভাপতি রুয়েল সাংমাসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে ফসলরক্ষা বাঁধ সংস্কার, ডুবন্ত বাঁধ ভাঙন বন্ধকরণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
খালিয়াজুরী গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত বিভাগীয় কার্যালয় ময়মনসিংহ ও জেলা প্রশাসক নেত্রকোনা বরাবরে পৃথক অভিযোগ দিয়েছেন।
অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাঁরা হলেন পাউবো জেলা শাখার কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী ও পাউবো কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পাউবো কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী, পাউবো কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব ওবায়দুল হক, পাউবো কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী, পাউবো কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব এনায়েত হোসেন, ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. মোশারফ হোসেন ইজহারুল, পিইসির সভাপতি বিধান কৃষ্ণ সরকার, সজল দে, মন্টু চক্রবর্তী, ফকরুল আলম, সুপ্রদীপ সরকার, ফুল মিয়া, রথীন্দ্র বর্মণ, মন্তোষ বিশ্বাস, অঞ্জন সরকার, ফখলুল ইসলাম, ঝুটন সরকার, তাজুল ইসলাম, আশিকুর রহমান ডেন্ডু, মোকসুদ মিয়া, আহাদনুর মিয়া, আনোয়ার হোসেন, কবিন্দ্র সরকার, সুচিত্রা তরফদার, হারুণ মিয়া, নিরঞ্জন চন্দ্র সরকার, আবুল কালাম, কামরুল ইসলাম তালুকদার, নজরুল ইসলাম জলিল, প্রাণেশ সরকার, ও আবু বকর। অভিযোগে জানা গেছে, জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের নাউটানা উপপ্রকল্প, খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নে কীর্ত্তনখোলা বেরিবাঁধ, ছাতিয়ার হাওরের ফসলরক্ষা বেরিবাঁধ, উপজেলার মনাইজান কালিপুর থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প পর্যন্ত এবং নগর ইউনিয়নের কাওরদাইর হাওর, মূল দাইয়ের বাঁধ পাইতলাধোয়া হাওরের ফসল রক্ষা ডুবন্ত বাঁধের ভাঙন বন্ধকরণ ও মেরামত কাজসহ বিভিন্ন বাঁধের সংস্কার কাজ করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০২২- ২৩ অর্থ বছরের এসব কাজ গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলতি ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। খালিয়াজুরী উপজেলায় বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামতের জন্য ১১৫টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ওই সব প্রকল্পের কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাবিটা নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। সরকারি নীতিমালা লঙ্গন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে কমিটি গঠন করে অর্থ হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া ওই সব কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে। সুদীপ সরকার পিআইসি কমিটির একজন সভাপতি। তাঁর বাড়ি প্রকল্প এলাকা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। তিনি প্রকল্প এলাকার ভোটার বা কৃষক নন। তিনি খালিয়াজুরী প্রেসক্লাবের সভাপতি শুভ সরকারের বাবা। ৩২ নং পিআইসির সভাপতি ঝুটন সরকার পেশায় একজন অটোরিকশাচালক। তিনিও উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতির চাচাতো ভাই। ১১ নং পিআইসির সভাপতি মন্তোষ বিশ্বস একজন দিনমজুর ও ভূমিহীন। প্রকল্প এলাকায় তাঁর কোনো জমি নেই। এমনি ধরনের নানা অনিয়ম করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পে।
এ ব্যাপারে খালিয়াজুরী গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার খালিয়াজুরীর ইউএনও এবং পাউবো কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সভাপতি রুয়েল সাংমাসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে গত ১৬ এপ্রিল দুদক সমন্বিত বিভাগীয় কার্যালয়, ময়মনসিংহ এবং ১৭ এপ্রিল নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা পাউবোর কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী ও পাউবো কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ করা হয়েছে। প্রকল্প কমিটি করার ব্যাপারে আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। আমাদের উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জড়ানো হয়।’
খালিয়াজুরীর ইউএনও এবং পাউবো কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সভাপতি রুয়েল সাংমা বলেন, উপজেলার কাবিটা প্রকল্পের সব কাজ যথাযথভাবে সরকারি নিয়ম মতো করা হয়েছে। কাজও শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্পের কাজ নিয়ে প্রকল্প কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে শুনেছি। এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘খালিয়াজুরীতে কাবিটা প্রকল্পের কাজ নিয়ে দুদকে অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। বিষয়টি দুদকই দেখবে। জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগের কপি এখনও আমি পাইনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’