খুকৃবির সাবেক উপাচার্য ও বর্তমান রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা নেওয়ার নির্দেশ
স্ত্রী, শ্যালিকা, ছেলেমেয়েসহ অনেক আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়ে মেয়াদের আগে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবির) প্রথম উপচার্য মো. শহীদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী। আজ সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে নিজে বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এই মামলা করেন তিনি।
আদালতের বিচারক মো. আব্দুস সালাম মামলাটি গ্রহণ করে সোনাডাঙ্গা থানাকে এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে বর্তমান রেজিস্ট্রার খন্দকার মাজাহারুল আনোয়ারকে।
ভিকটিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুলতানা রহমান শিল্পী জানান, ভিকটিম বা মামলার বাদী খুকৃবির কন্ট্রোলার স্টোর কিপার হিসেবে ২০২১ সালে কর্মরত ছিলেন। অপরদিকে সেই সময় ভিসি নিজে কন্ট্রোলার বোর্ডের প্রধান এবং ২ নং আসামি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তাঁকে ভিসি স্যারে খাবারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। তিনি বিভিন্ন সময় খাবার পৌঁছে দিতে গেলে ভিসি কুপ্রস্তাব দেন। বিষয়টি ভিকটিম ২ নং আসামিকে জানান। একপর্যায়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ২ নং আসামির সহযোগিতায় ভিসি তাঁকে ধর্ষণ করেন। পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিকটিমকে তাঁর স্বামীকে তালাক দিতে বলেন। বিষয়টি ১০০ টাকা স্ট্যাম্পে লিখিত হওয়ার পর ভিকটিম তাঁর স্বামীকে তালাক দেন। পরে বিয়ে না করেও বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি এবং স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করেন। এরপর তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে উপচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী করা হয়।
ভিকটিমের আইনজীবী আরও জানান, ২০২২ সালে ৩০ নভেম্বর থেকে ভিসি ভিকটিমের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
মামলার বাদী জানান, তিনি সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করতে গেলে তারা মামলা নেয়নি। তাই তিনি আদালতে মামলা করেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ জানান, আদালত মামলা গ্রহণ করে সোনাডাঙ্গা থানাকে এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় সাবেক ভিসি ও বর্তমান রেজিস্ট্রারকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় মোট পাঁচ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
ধর্ষণের অভিযোগ বিষয়ে কথা বলার জন্য খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. শহীদুর রহমান খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘ওই ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আগামীকাল খোঁজ নিয়ে যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটেই থাকে বলত পারব। এটি ওই নারী ও ভিসির একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, সেটি আমার জানার কথা নয়।’
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ৫ জুলাই জাতীয় সংসদে খুলনা কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় বিল পাস হয়। তারপর থেকে নানাভাবে আলোচনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়।
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রহমান খান ২০১৮ সালে ১১ সেপ্টেম্বর প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তদন্ত করে এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ পরিবারের নয় সদস্যকে নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় তাঁকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।