নওগাঁয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ধীরগতি : বদলগাছী পিআইওকে শোকজ
মুজিববর্ষ উপলক্ষে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আবাদপুরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় চলছে গৃহ নির্মাণের কাজ। সেই কাজে উঠেছে অবেহলার অভিযোগ। সেই অভিযোগ তুলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. ময়নুল ইসলামকে বলা হয় কারণ দর্শাতে। সময় দেওয়া হয় সাত দিন। সে সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু কাজে আসেনি গতি। যদিও বৃষ্টির অজুহাত তুলে পিআইও বলেছেন, ‘দ্রুতই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীন ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন’ ‘ক’ শ্রেণির পরিবারের জন্য একক গৃহ নির্মাণ করতে ২৯ মে চিঠি ইস্যু করে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ শাখা। ওই চিঠি ৬ জুন সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পৌঁছায়। বদলগাছী উপজেলার ৩০টি একক গৃহ নির্মাণের জন্য সর্বমোট ৭৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বদলগাছী উপজেলার আবাদপুরে নির্মাণাধীন বাড়িগুলোতে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। কোথাও রং করা হচ্ছে, আবার কোথাও চলছে টিনের চালা, দরজা, জানালার কাজ। কোনো কোনোটিতে ইট-সিমেন্টের কাজও করতে দেখা যায়।
এদিকে, পিআইওকে কারণ দর্শাতে বলা চিঠিতে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. আলপনা ইয়াসমিন বলেছেন, নভেম্বর মাস পর্যন্ত গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের কাজ অবশিষ্ট রেখেছেন। এতে উপকারভোগী উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং উপকারভোগীরা অনিশ্চিয়তার মধ্যে আছে।’
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘জুলাই মাসে পুরোদমে কাজ শুরু হলেও আপনার অবহেলার কারণে আবাদপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে একই জায়গায় নির্মাণাধীন মাত্র ৩০টি বাড়ির কাজ পাঁচ মাসেও সম্পন্ন হচ্ছে না। আপনার অবহেলার কারণে এবং সরজমিনে দেখে বোঝা যায়, কম মিস্ত্রি দিয়ে এবং কাজের প্রত্যেকটি স্টেজে বিলম্বের কারণে দেরি হচ্ছে।’
এরপর চিঠিতে ৩০টি ঘরের শতভাগ কাজ পাঁচ মাসেও কেন সম্পন্ন হয়নি তা সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হয়।
২৯ নভেম্বর এই শোকজ করা হয়, যা গতকাল গণমাধ্যমের কাছে আসে। শোকজ পত্রের অনুলিপি প্রকল্প পরিচালক, আশ্রায়ন-২ প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, নওগাঁর জেলা প্রশাসক এবং জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে বদলগাছী উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. ময়নুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘আমি শোকজ লেটারের জবাব ইতোমধ্যে দাখিল করেছি এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। দু-একটি শেষ হয়েছে। সেগুলোতে ইতোমধ্যে উপকারভোগীরা উঠতে শুরু করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে বর্ষা আরম্ভ হওয়ায় সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। অতি দ্রুত কাজ শেষ করে উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে।’
এ বিষয়ে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. আলপনা ইয়াসমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পাঁচ মাসেও পিআইও মাত্র ৩০টি বাড়ি নির্মাণ করে হস্তান্তর করতে না পারা এবং নির্মাণ কাজে অবহেলার বিষয়টি প্রতিয়মান হওয়ায় শোকজ করা হয়েছে। সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে শোকজ গোপনীয় বিষয়। এটা নিয়ে এর চেয়ে বেশি কথা বলা সম্ভব না।’ তবে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কিছু বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে। অতি শীঘ্রই বাড়িগুলো উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে।’