পটুয়াখালীর ২৮১ পরিবার পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক বাড়ি
অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলী আর নগর জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ২৮১টি একতলা বাড়ি। মসজিদ, স্কুল, ক্লিনিক, দোকান, কমিউনিটি সেন্টার, সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার, খেলার মাঠ, কবরস্থান, পুকুরও রয়েছে বাড়িগুলোর ফাঁকে ফাঁকে। যেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে একটি উপশহর। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে গেলে এ উপশহরটি দেখে যে কেউ রোমাঞ্চিত হবেন।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কারণে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য এ বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। জমির মূল্য বাবদ তিনগুণ টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারকে একটি করে বাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রকল্পের আওতায় এ বাড়িগুলোর নির্মাণকাজ শেষে এখন বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
সম্প্রতি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চীন ও বাংলাদেশের নির্মাণ শ্রমিক এবং কারিগরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তারা কাজ করে চলেছেন। বাড়িগুলোর আস্তর ও পলেস্তরার কাজ করছেন শ্রমিকরা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লি. (আরপিসিএল)’ চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নরিনকো ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যৌথভাবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে।
সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে (আরপিসিএল) ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য ধরনের জ্বালানিসহ মোট ২৭৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পটুয়াখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের ধানখালী, নিশানবাড়িয়া ও লোন্দা মৌজায় ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ সুবিধা রেখে তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৯১৫ দশশিক ৭৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজের পাশাপাশি আবাসিক এলাকার নির্মাণ কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
প্রকল্পের পরিচালক মো. তৌফিক ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ভূমি অধিগ্রহণের পর ভূমি সুরক্ষাসহ ভূমি উন্নয়নকাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ফলে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য ৩০ একর জমিতে দৃষ্টিনন্দন আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বাড়িগুলোর চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
সরকারি আরপিসিএল এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ৯ মে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রায় ২০০ কোটি ডলারের বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীন যৌথভাবে বিনিয়োগ করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে এক দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হবে প্রায় আট সেন্ট বা সাড়ে ছয় টাকা।
প্রকল্প পরিচালক মো. তৌফিক ইসলাম আরো বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি টারবাইনের নির্মাণকাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ ২৭ ভাগ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বয়লার, স্টিম টারবাইন ও জেনারেটর আগামী আগস্টে চলে আসবে বলে জানান তিনি।
প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক চায়না নরিনকো কোম্পানির কর্মকর্তা চি ইউয়ে বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের বড় কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম। এখানে বিশ্বমানের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ২৫ বছর ধরা হয়েছে। তবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এখান থেকে ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
বাস্তুচ্যুতদের আবাসনের জন্য নির্মিত বাড়িগুলোর আরপিসিএলের নির্বাহী পরিচালক সেলিম ভূইয়া সাংবাদিকদের জানান, জমি অধিগ্রহণ করার জন্য নিয়ম অনুযায়ী তিনগুণ দাম দেওয়া হয়েছে। আর এই বাড়ি আরপিসিএল দায়বদ্ধতা থেকে তৈরি করে দিয়েছে। যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তাদের এই বাড়ি দেওয়া হবে।