পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর হত্যায় চার জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়কে হত্যার দায়ে জঙ্গিনেতা জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধীসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। সেইসঙ্গে অপর দুটি মামলায় তাদের চারজনকে যথাক্রমে ৫ ও ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে।
আজ রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- গাইবান্ধার সাঘাটা থানার বোনারপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব ভূতমারা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী (২৬), বগুড়ার শাহজাহানপুর থানার ক্ষুদ্র কুষ্টিয়া গ্রামের রাজিবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ওরফে বাঁধন (২৫), পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানার দেবীগঞ্জ কামাতপাড়ার আলমগীর হোসেন (২৪) ও একই থানার প্রধানাবাদ মসজিদপাড়ার রমজান আলী (৩৩)।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা নিষিদ্ধঘোষিত জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। এদের মধ্যে রাজীব গান্ধী হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রাজিবুল ইসলাম পলাতক রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার। রায় ঘোষণার পর কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় দণ্ডিত আসামিদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
একই মামলার অপর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন। এ ছাড়া অপর দুই আসামি বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরের চীন-মৈত্রী সেতু সংলগ্ন সোনাপাতা এলাকায় জেএমবির অস্ত্রধারী সদস্যরা শ্রী শ্রী সন্ত গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ মহারাজ যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলাকেটে হত্যা করে। এ সময় তাদের বাধা দিতে গেলে গুলিবিদ্ধ হন ওই মঠের আরেক সেবক।
এ ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহতের বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ রায়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আরো দুটি মামলা করে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ।
পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে মামলাটি বিচারের জন্য রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালে আসার পর এ মামলায় ৩৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। পরে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আজ রায় দেন বিচারক অনুপ কুমার।
রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় তিনজন সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা একটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে কিলিংমিশনে অংশ নেন। এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেএমবির শীর্ষ নেতা রাজীব গান্ধী। তিনি সিরিয়া যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে তিনি জেএমবিতে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন ছিলেন এই রাজীব গান্ধী।’