বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যা বলল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক বার্ষিক এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধীদের মনোভাব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার, সাংবাদিক নিপীড়ন, শিশুশ্রমসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে।
প্রতি বছর ১৯৮টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বৈশ্বিক এ মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বহাল থাকেন। তবে, ব্যালট বাক্স ভর্তি এবং বিরোধী পোলিং এজেন্ট ও ভোটারকে ভয় দেখানসহ নানা কারণেই এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে পর্যবেক্ষকরা প্রতিবেদন দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে গত বছরের বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে দেওয়া বিবরণে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নাগরিকের প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ, শাস্তি, নির্যাতন বা মামলা, কারাগারে জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পরিবেশ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক, রাজনৈতিক বন্দি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বাধা এবং অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তির ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বেআইনি হস্তক্ষেপ, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উঠলে তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেওয়া, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা-হুমকি এবং অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি করা; ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর হস্তক্ষেপ, সংগঠন, তহবিল বা বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিক সংগঠনের ওপর বিধিনিষেধমূলক আইনের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া শরণার্থীদের চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ, উদ্বাস্তুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর গুরুতর এবং অযৌক্তিক বিধিনিষেধ, সরকারি দুর্নীতি; দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে হয়রানি বা সেগুলোর ওপর বিধিনিষেধ, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার জন্য তদন্ত ও জবাবদিহিতার অভাব, যার মধ্যে গৃহনির্যাতন, যৌন সহিংসতা, শিশু নির্যাতন, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে, স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ এবং শিশুশ্রমসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক চর্চা উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিবেদনে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্রাকটিসেস’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ছাড়াও অন্যান্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানা যাবে। এই প্রতিবেদনে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।