ভৈরবের খামারিরা দুধে লোকসান গুনে গুনে দিশেহারা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সহস্রাধিক খামারি চলমান বিধিনিষেধের কারণে উৎপাদিত দুধ বিক্রি নিয়ে আছে বিপাকে। প্রতিদিনই উৎপাদিত বেশির ভাগ দুধ অবিক্রিত থাকা এবং অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় এ লোকসান গুনছে তারা।
এদিকে স্থানীয় হোটেল-মিষ্টির দোকান বন্ধ। যানবাহন চলাচল না করায় ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায়ও পাঠাতে পারছে না এ দুধ। ফলে এই সংকট হয়েছে আরও প্রকট।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, ভৈরবের গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষি ও প্রাণিসম্পদ নির্ভর। ফলে এখানকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ বিভিন্ন খামারের সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে অন্যতম হলো পশু লালনপালন ও দুধ উৎপাদন। ছোট বড় মিলিয়ে এ উপজেলায় প্রায় এক হাজারেরও বেশি দুধ উৎপাদনের খামার রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এর বেশির ভাগ দুধ রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরে বিক্রি হয়ে থাকে।
চলমান কঠোর বিধিনিষেধে হোটেল-মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় খামারিরা উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে পারছে না। যানবাহন চলাচল না করায় দুধ যাচ্ছে না আশপাশের জেলা-উপজেলা শহরে। ফলে প্রতিদিনই তাদের উৎপাদিত দুধের একটি বড় অংশ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। আবার যাও বিক্রি হয়, তা অর্ধেক মূল্যে। ফলে বড় রকমের লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
ভৈরব পৌর শহরের কালিপুর উত্তরপাড়ার এআর ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেডের চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান রকি জানান, তার খামারে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৩০ লিটার দুধ হয়। এই দুধ বিক্রি নিয়ে তিনি বেশ বিপাকে আছেন। বর্তমানে বেশির ভাগই অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। আর যা বিক্রি হচ্ছে, তাও ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এত দিন তার খামারের দুধ বিক্রি হতো ৫৫ থেকে ৬০ টাকা লিটার। ফলে প্রতিদিন তাকে একটা বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর নিউ টাউন এলাকার রুজেন ডেইরি ফার্মের মালিক আশরাফুল আলম রুজেন জানান, তার খামারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। যা স্থানীয় বিভিন্ন মিষ্টি তৈরির কারখানা ও দোকানে বিক্রি হতো। এখন সেগুলো বন্ধ থাকায় দুধ বিক্রি নিয়ে তিনি পড়েছেন সংকটে। তার কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় ফেরি করে এই দুধ বিক্রি করতে গিয়ে প্রতি লিটার ৩০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের ছাগাইয়া দক্ষিণপাড়ার আহাম্মদ বেপারী বহুমুখী ফার্মের মালিক পাভেল মিয়া জানান, প্রতিদিন তার খামার থেকে ১০০ লিটার দুধ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে দুধের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। প্রতিদিনের দুধ বিক্রির টাকায় তার খামারসহ সংসার চলত। কিন্তু দুধের দাম কমে যাওয়ায় এখন নিজের পকেট থেকে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। এই লোকসান তিনি কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না।
ভৈরব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান লকডাউনের কারণে খামারিদের দুধ বিক্রি নিয়ে জটিলতা এবং লোকসানের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘গত বছর এখানকার লোকসানী খামারিদের প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। এবারও তালিকা পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আশা করেন এবারও প্রণোদনার আওতায় আসবে কিছু খামারি।