অ্যাসিডযুক্ত পানি খেয়ে মারা গেল ৫ গরু, অসহায় কৃষকের কান্না
জামালপুর সদর উপজেলায় পুরোনো ব্যাটারি পোড়ানো একটি অবৈধ কারখানার বিষাক্ত অ্যাসিড ও রাসায়নিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ায় অ্যাসিড মিশ্রিত ঘাস ও পানি খেয়ে পাঁচটি গরু মারা গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে আরও আটটি গরু। এই ঘটনায় ব্যাটারি কারখানার ১৮ জন শ্রমিককে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।
গতকাল বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার ইটাইল ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরুন্দি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সজিব।
মারা যাওয়া গরুগুলোর মালিক স্থানীয় কৃষক ও ভূমিহীন হেকমত আলী। তার দাবি, গরুগুলোর মৃত্যুর ঘটনায় তার অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং তারা পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অসহায় এই কৃষক কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শেরপুর জেলার বালুখোড়া এলাকার মো. আপেল ও লিখনের নেতৃত্বে ডিগ্রিরচর এলাকায় অবৈধভাবে পুরোনো ব্যাটারি পোড়ানোর একটি কারখানা পরিচালিত হচ্ছিল। সেখান থেকে নির্গত বিষাক্ত অ্যাসিড ও রাসায়নিক বর্জ্য আশপাশের কৃষিজমি ও পানিতে মিশে যায়। ওই জমিতে চড়ে বেড়ানো গরুগুলো বুধবার সকালে বিষাক্ত ঘাস ও অ্যাসিডযুক্ত পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাঁচটি গরু মারা যায় এবং আটটি আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আরও পড়ুন : চবি ছাত্রদলের ৪২০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি
অসহায় কণ্ঠে হেকমত আলী বলেন, আমার সব গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হে আল্লাহ, আমি এখন কী করব! গরুই ছিল আমার জীবিকার একমাত্র ভরসা।
তার দুই মেয়ে ভাবনা ও লিমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমাদের কোনো জমিজমা নেই। বাবার গরুর দুধ বিক্রি করেই সংসার ও পড়াশোনা চলত। এখন সব শেষ। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানায় ব্যাটারি পোড়ানোর সময় সৃষ্ট ধোঁয়া, সিসা এবং অ্যাসিড জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ শুধু গবাদিপশুই নয়, আশপাশের হাঁস-মুরগি ও ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পরিবেশ আইন অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে এ কারখানা পরিচালনা করা হলেও যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন : জাতিসংঘের আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর ছবি
নরুন্দি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সজিব জানান, ব্যাটারি কারখানার ১৮ জন শ্রমিককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ও তদন্ত চলছে।
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং কারখানার তথ্য সংগ্রহ করেছে। তবে ভুক্তভোগী পরিবার থেকে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের চার সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেছে। মৃত গরুর ময়নাতদন্ত চলছে, নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে। রিপোর্ট এলে সঠিক কারণ জানা যাবে। অসুস্থ গরুগুলোর চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

নাহিদ হাসান, জামালপুর (সদর-মেলান্দহ)